ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

প্রদর্শনী উদ্বোধনীতে বক্তারা

‘নীতি সহায়তা পেলে স্বর্ণশিল্প খাত বিলিয়ন ডলার আনবে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৪ জুলাই ২০২৪

‘নীতি সহায়তা পেলে স্বর্ণশিল্প খাত বিলিয়ন ডলার আনবে’

আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়

নীতি সহায়তা পেলে তৈরি পোশাক খাতের মতো স্বর্ণশিল্প খাতও একদিন বিলিয়ন ডলার আনবে বলে মনে করেন স্বর্ণশিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এই শিল্প যদি নীতি সহায়তা পায় তাহলে আরও অনেক এগিয়ে যাবে। সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে সুন্দরভাবে আমরা ব্যবসা করতে চাই। তবে এজন্য ভালো নীতি সহায়তা আমাদের দরকার। নীতি সহায়তা পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তৈরি করা, সেটা পূরণে এ খাত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশ (আইজেএমইবি)-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রান্তি নাগভেকার, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি দিলীপ কুমার রায়, সহ-সভাপতি সুমিত ঘোষ অপু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল।
এর আগে ফিতা কেটে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়বসহ বাজুসের নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আজকে দেশে তিন দিনের প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী শুরু হলো। এটা একটা আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। বাজুসের ৪০ হাজার সদস্যের সঙ্গে দেশের আরও ১০ লাখ মানুষ জড়িত। এই শিল্প রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে অবদান রাখছে। এই শিল্প তৈরি পোশাক খাতের মতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আনবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এই শিল্প যদি নীতি সহায়তা পায় তাহলে ব্যবসায়িকভাবে আরও অনেক এগিয়ে যাবে।

তবে শিল্পকারখানা ও ট্রেড এই দুইটা বিষয়কে আলাদা করতে হবে। যারা শিল্পকারখানা করেন তাদের জন্য নীতি সহায়তা একরকম এবং যারা ট্রেড করেন তাদের জন্য নীতি সহায়তা আরেকরকম হবে। তাহলে অনেকেই শিল্প করার জন্য এগিয়ে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তৈরি করা, সেটা পূরণ হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, স্বর্ণ বিক্রয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভ্যাট ৫ শতাংশের নিচে আছে। আমি এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব, যাতে স্বর্ণ বিক্রয়ে ৩ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে দেয়।
বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো, দেশের জুয়েলারি শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ নীতিমালা করেছেন। আর সেই নীতিমালা বাস্তবায়নে বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর দেশের ৪০ হাজার ব্যবসায়ীকে একটি ছাতার নিচে এনেছেন। কারণ এখন থেকে আমরা আর বিদেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার এনে বিক্রি করব না। 
আমাদের দেশে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করব, এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের এই প্রদর্শনী।

আমাদের একটি বদনাম আছে যে, বিদেশ থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণালঙ্কারের দাম ভরিতে ৮-১০ হাজার টাকা বেশি। সেটা যাতে না থাকে সেজন্য এই প্রদর্শনী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতে তৈরি করলে ৮-৯ শতাংশ নষ্ট হয়। আর মেশিনে তৈরি করলে ২-৩ শতাংশ নষ্ট হবে। এই যে ৭ হাজার টাকার পার্থক্য, সেটা আর থাকবে না। এজন্য আমদের যে ছোট বড় কারখানা রয়েছে, সেগুলো আমাদের অলংকার দেশেই তৈরি করবে এবং চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে। অনেকেই বলেছেন, মেশিনে অলংকার তৈরি হলে ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, কারিগর বেকার হবে।

সেটা কখনো হবে না, কারণ স্বর্ণশিল্পীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হচ্ছে। চারুকলার ছাত্রদের দিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে, সেই ডিজাইনে অলংকার তৈরি করে আমাদের স্বর্ণশিল্পীরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
দেশে নতুন জুয়েলারি কারখানা স্থাপন ও পুরাতন কারখানাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন এবং রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস যৌথভাবে জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য ‘গহনায় হোক প্রযুক্তির ছোঁয়া’।

এ প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি ব্যবসায়ী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ভারত, ইতালি, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান।

প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ভারতের ৮টি প্রতিষ্ঠান তিশ্য সিএনসি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, নিও ইন্সট্রুমেন্ট, মাইক্রো ম্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, অনন্ত জুয়েলস অ্যান্ড টেকনোলজি, সোলাংকি মেশিনারিজ ওয়ার্কস, ইরা কর্পোরেশন, কোয়ান্টাম ইকুইপমেন্ট ও অ্যাকজেট সলিউশন, প্যাসিও ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

ইতালির ২টি প্রতিষ্ঠান জেটিই ও ফাস্টি; তুরস্কের ২টি প্রতিষ্ঠান ওটেক ও গুভেনিস; জার্মানির ফিশার; চীনের ডু ইট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড; থাইল্যান্ডের বেসিক জুয়েলারি কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ৫টি প্রতিষ্ঠান ড্রিমস ইন্সট্রুমেন্ট টেকনোলজি, রাজঐশ্বরী, এক্সপার্ট ইন্সট্রুমেন্ট, ট্রাস্ট ইন্সট্রুমেন্ট বাংলাদেশ ও র‌্যার্টস বিডি।

×