![সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/সঞ্চয়পত্র-2405191433.jpg)
.
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন অনেকে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যখন ব্যাংকে আমানতের সুদের হার বাড়ছে, তখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে সঞ্চয়পত্র। যার প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে।
সর্বশেষ গত মার্চে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আবার নানা নিয়ম-কানুন আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। আগের মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। তবে ওই সময় এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে পুরো অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার এক টাকাও ঋণ পায়নি। মূলত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৩ সালের মার্চে ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে ভাঙানো বাবদ (নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বা মেয়াদান্তের আগে) আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। নিট বিক্রিকে সরকারের ধার বা ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। মেয়াদ পূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার হয় সর্বনি¤œ ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যায়।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও, এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।