সিন্ডিকেট
কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলে তার নম্বর বাড়ে। একে বলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি। এ কারণে ঘুরেফিরে সরকারের বিভিন্ন কাজ পাচ্ছে মাত্র কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে সকল সরকারি সংস্থা। এর ফলে যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। কমিশন বাণিজ্যে আবার কোনো কোনো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি দরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির অপব্যবহারের কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপি) আইন-২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮’। কিন্তু ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে প্রায় সব কাজ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অকার্যকর হতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের একনেক বৈঠকে সরকারি কাজকে প্রতিযোগিতামূলক করতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের নির্দেশ দিলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গত বছরের মাঝামাঝি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টের (পিপিএ) সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথিরিটি (বিপিপিএ) নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সমস্যর কথা স্বীকার করে বলেন, বিপিপিএ প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনা করছে। সমস্যা দূর করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হবে। তবে কবে নাগাদ এটি হবেÑ এই প্রশ্নের সঠিক জবাব তাদের কাছে পাওয়া যায়নি।
সরকারি অর্থ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার জন্য সরকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ জারি করে। ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিতে ওই দুটি আইন ও বিধিমালা ব্যবহার করে সরকারি কাজের গুণমান উন্নয়নের কথা থাকলেও ফল হয়েছে উল্টো। আগে যেখানে প্রতিটি কাজের জন্য পাঁচ থেকে ছয়টি বা ততোধিক প্রস্তাব জমা পড়ত এখন গড়ে সেখানে দুটির মতো প্রস্তাব দাখিল হয়। অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে প্রস্তাব দাখিল হয় একটির মতো।
অর্থাৎ ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলে তার নম্বর বেড়ে যায়। খুব সহজে সেই প্রতিষ্ঠান কাজও পেয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিকে কার্যত ‘প্যাড কোটেশন’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে কার কাজের সংখ্যা কত বেশি সেই ভলিউমের ভিত্তিতে প্রায় সব কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট। কাজের গোপন চুক্তিমূল্য আগে জানিয়ে দেওয়া হয় পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
প্রতিযোগী অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোপন চুক্তিমূল্য না জানতে পারায় ছিটকে পড়ছে। ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির কারণে প্রকল্পের প্রায় সব কাজ চলে যাচ্ছে একজনের হাতে, অন্যদিকে তিনি আবার সে কাজটি বেশি মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন তৃতীয় পক্ষের কাছে। বেশি টাকায় কাজ নেওয়ায় কাজের মানও ঠিক রাখতে পারছে না তারা। দীর্ঘদিন ধরে সওজ অধিদপ্তরে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) ও সীমিত ঠিকাদারের মধ্যে দরপত্র (এলটিএম) পদ্ধতি চালু রয়েছে।
২০২১ সালে এক ধাপ দুই খাম (ওএসটিইএম) পদ্ধতি চালু করা হয়। কোনো পদ্ধতিতেই গুটিকয় ঠিকাদারের কাজ পাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে (সওজ) কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃত কাজের সংখ্যার ভিত্তিতে কেউ কাজ পেলে সেখানে কারো আপত্তি থাকে না। দেখা যাচ্ছে, প্যাড কোটেশনের মাধ্যমে বড় কাজও চলে যাচ্ছে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের মতে, প্যাড কোটেশন কোনো দরপত্র নয়।
এক্ষেত্রে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ও থাকে না। এমন একটি ঘটনা প্রকাশ পায় ২০১৯ সালে। দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্স তাদের চলমান ১৭টি প্রকল্পের সব কটির কাজ বন্ধ করে দেয়। এর পরই টনক নড়তে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। একই প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এতগুলো কাজ পেল কীভাবেÑ সে প্রশ্ন দেখা দেয়। বাস্তবে ক্রয় আইনের দুর্বলতার কারণেই এ ধরনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে।
একসঙ্গে এতগুলো কাজ বাস্তবায়ন করার মতো সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে কাজের মান নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। ওই সময় অনুষ্ঠিত একটি একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, একজন ঠিকাদার এত কাজ পায় কিভাবে? এরপর থেকে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা সংশোধনীর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ বিষয়ে সিপিটিইউ তৎপর হয়। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে পিপিএ সংশোধনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ক্ষেত্রে যাতে এককভাবে কেউ একাধিক কাজ না পায় এবং এককভাবে শুধু বড় ঠিকাদার যাতে কাজ না পায় সেজন্য এ সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, একক ঠিকাদার যাতে একাধিক কাজ না পায় সেজন্য ২০১৯ সালের এক একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দরপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট কোনো ঠিকাদার বা বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ না পায়। নতুন ঠিকাদার যাতে কাজ পায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি ক্রয় আইন পরিবর্তনের লক্ষে গত বছর মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়। তিনি বলেন, আইনের যেসব ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বড় ঠিকাদাররা অনেক কাজ বাগিয়ে নেন সেগুলো বন্ধে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো আইনটি সংশোধন হয়নি।
আইনটি সংস্কারের কাজে সরাসরি যুক্ত ছিল সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। গত সেপ্টেম্বরে নতুন গেজেট প্রকাশ করে সিপিটিইউ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথিরিটি (বিপিপিএ) করা হয়। সিপিটিইউর সাবেক সাবেক মহাপরিচালক মো. শোহেলুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিপিপিএর একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৬ সালে সরকারি ক্রয় আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে বলা হয়-দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০ শতাংশ কম বা বেশির সুযোগ রয়েছে। এটির মূল কথা হলো-উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে শতকরা ১০ শতাংশ মূল্যের চেয়ে বেশি বা কম হলে সেই দরপত্র প্রস্তাব বাতিল করার নিয়ম রয়েছে বর্তমান সরকারি ক্রয় আইনে। যেমন-১০০ টাকার জিনিস ৯০ টাকার কম বা ১১০ টাকার বেশি কোড করলে সেই টেন্ডার গ্রহণ করা হয় না।
এ ক্ষেত্রে অভিযোগ-অভ্যন্তরীণ ও ভৌত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে অনেক ক্ষেত্রে যে কোনোভাবেই হোক দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁস হয়ে যায়। ফলে প্রতিযোগী ঠিকাদাররা যে দর প্রস্তাব করেন, সেটার সঙ্গে উল্লেখিত দরের সমতা হয়ে যায়। একাধিক ঠিকাদারের ক্ষেত্রে এটা হয়ে থাকে। আইনে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে লটারির বিধান নেই। বর্তমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) অনুযায়ী দরদাতার অতীত রেকর্ড, এক বছরে কাজের মাত্রা, অভিজ্ঞতা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও অন্য সব যোগ্যতার কারণে বড় ঠিকাদাররাই নির্বাচিত হয়। অনেক সময় একই ঠিকাদার বারবার নির্বাচিত হয়। পরে সেই কাজ মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই কমিশন দেওয়া হয় ডলারের মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন ছোট বা নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ পায় না, অন্যদিকে কমিশন নিয়ে অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ায় কাজের মান ঠিক থাকে না। এসব বিষয়ে কীভাবে সংশোধনী আনা যায় সেসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে সিপিটিইউ।
সিপিটিইউর একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে আইনটি সংশোধনের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে আইনে ১০ শতাংশের যে সুযোগ রাখা আছে সেটি বাতিলের পক্ষে সব পক্ষ একমত হয়। কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবে এটি পুরোপুরি বাতিল না করে সীমিত করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)’ এবং ‘সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ও টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)’ একগুচ্ছ প্রস্তাব তৈরি করে।
২০২০ সালের নভেম্বরে একনেকের সভায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনেক কাজ পাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তখন একটি কাজ শেষ না করলে অন্য কাজ না দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ বিষয়ে পরে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তরে নির্দেশনা দিয়ে সিপিটিইউ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ১১ মে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে সদস্য রাখা হয়। কমিটির আলোচনায় বলা হয়, বিদ্যমান পদ্ধতিতে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশিসংখ্যক কাজ করেছে তাকে বেশি নম্বর দেওয়া হয়। এতে ঘুরেফিরে কাজ করছে মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদার কাজও সম্পন্ন করছে না। একক ঠিকাদারের হাতে একাধিক কাজ আটকে থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে তা পরিহার করতে হলে দরপত্র মূল্যায়নের পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে কিছু সংশোধন এবং সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথিরিটিকে (বিপিপিএ) সেগুলো পরিমার্জন করে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে কীভাবে আইনগত পদ্ধতিতে একক ঠিকাদারের একাধিক কাজ পাওয়া কমানো যায় সেটি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যা যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৩০০টি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সারাদেশে মানসম্মত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৩০টি। ফলে ঘুরেফিরে তারাই কাজ পায়। এটা একটা ঝুঁকি। এই সংকট নিরসনে সওজ তিন-চার বছর ধরে কাজ করছে। তবে দরপত্রের পদ্ধতিটি চূড়ান্ত করে সিপিটিইউ। সওজ কেবল সুপারিশ করতে পারে। প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, দুই পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) অধিকাংশ কাজ হয়। দরপত্রে যে দর উল্লেখ করা হয় তার ১০ শতাংশের কম বা বেশি দর দিতে পারেন না ঠিকাদাররা। দর সমান হলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে দক্ষতা নির্ণয় করা হয়। বিদ্যমান ই-জিপি পদ্ধতিতে কারা টেন্ডার সাবমিট করেছে তা বোঝা যায় না। ই-জিপিতে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে যেসব ঠিকাদার অতীতে বেশি কাজ করেছে বা বেশিসংখ্যক কাজ চলমান রয়েছে, তারাই বেশি নম্বর পায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দরপত্র পক্রিয়ার আইনে ফাঁক-ফোকর বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত হবে। তবে এটি কার্যকর করতে হলে সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। কেননা যত কঠোর আইনই হোক না কেন, কর্মকর্তারা অসৎ হলে তো সব তথ্যই পাচার হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দেখা যায়, গ্রামীণ একদল কাজ পেয়ে আরেক দলের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আইন সংস্কারের পাশাপাশি এ অবস্থা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।