ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নারী-পুরুষ সমতা জরুরি

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নারী-পুরুষ সমতা জরুরি

ভার্চুয়েল সংলাপ

  •  বাংলাদেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডের ক্ষুদ্রমৎস্য খাত সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংলাপে বিশিষ্টজনদের অভিমত

বাংলাদেশ, ভারত এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র-মৎস্যখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন প্রক্রিয়াসহ নানাবিধ কর্মকান্ডে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্ত্বেও সম্পদ বা পরিষেবাগুলোতে তারা উপেক্ষিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সীমিত ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ঘাটতি, সম্পদের উপর মালিকানায় তাদের অবদান এখনো অবমূল্যায়িত। 

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সামুদ্রিক পরিবশেগত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা জরুরী বলে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন। সুইড-বায়োর অর্থায়নে এসডিএফ, থাইল্যান্ড;  ল-ট্রাস্ট, ভারত; এবং কোস্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে “ক্ষুদ্র মৎস্যখাতে জেন্ডার বিষয়ক সাধারণ বৈশিষ্ট্য: বাংলাদেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডের তুলনামূলক চিত্র” শীর্ষক আজ এক ভার্চুয়াল আঞ্চলিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সোমবার  (১৮ ডিসেম্বর)  কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক এর সঞ্চালনায় ভার্চুয়েল প্লাটর্মের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংলাগে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে অধ্যাপক (অব.) ড: আব্দুল ওাহার, পিএইচডি, রেজাউল করিম চৌধুরী, শেখ আসাদ, ভারতের গান্ধি মাথি আলগার, থাইল্যান্ড থেকে রাবাডি প্রসের্টচারোএনসুক, সুপাপোর্ন ফানরিয়া, খাইরায়াহ রহমানিয়া, শ্রীলংকা থেকে হারমান কুমারা এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সুশান কায়রা প্রমূখ। 

সংলাপে বাংলাদেশ, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে তিনটি দেশের মৎস্যজীবীদের আর্থ -সামাজিক অবস্থা তুলে ধরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে জাহিদুল ইসলাম, ড. কল্পনা সতীশ এবং ভালন্টন কোয়াটানকাম। এছাড়া তিনটি দেশের ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। 

এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মাছ ধরার বড় বড় ট্রলারগুলোকে সরকার নিবন্ধন দিলেও তারা নিয়ম লংঘন করে ক্ষুদ্র জেলেদের সীমানায় মাছ ধরছে। ফলে ক্ষুদ্র জেলেদের আয়ের ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোড়দার এবং সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। 

প্রফেসর(অব) আব্দুল ওহাব পিএইচডি বলেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে নারীরা পুরুষদের থেকে অনেক পিছিয়ে। জেলে পল্লীগুলোতে বাল্য বিয়ের মতো সামাজিক সমস্যা এখনো অনেক প্রকট। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং  বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টির জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্লাটফর্ম তৈরির তাগিদ দেন তিনি।

খাইরায়াহ রহমানিয়া বলেন, শিল্পায়নের কারনে থ্যাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, মৎস্যখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সেজন্য তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের দাবি জানান। সুপাপোর্ন ফানরিয়া বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারনে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে। সেজন্য খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন প্রক্রিয়ায় নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। রাবাডি প্রসের্টচারো এনসুক বলেন ক্ষুদ্র মৎস্য পরিবারের নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া তাদের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

হারমান কুমারা বলেন, ক্ষুদ্র মৎস্যখাতে  নারীদের এত অবদান সত্ত্বেও তারা উপেক্ষিত। এজন্য সরকারের সাথে আ্যাডভোকেসি করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ায় যুব সম্প্রদায়কে যুক্ত করতে হবে। সুশান কিরা বলেন, মৎস্যখাতের সকল বিষয়ে পুরুষদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমরা যদি গাইডলাইন বা নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাবো সকল নির্দেশনা শুধু পুরুষদের জন্য। তিনি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জোর দাবি জানান। গান্ধি মাথি আলগার বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিায় নারীর ভূমিকা অস্বীকার করা হচ্ছে। জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

উপস্থিত ক্ষুদ্র জেলে সম্পদায়ের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে সরকারি পরিষেবা ও সম্পদে নারীর অন্তর্ভুক্তি, মজুরি বৈষম্য এবং কর্ম পরিবেশের অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর আশু সমাধান, উদ্যেক্তা তৈরির জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো, ক্ষুদ্র জেলে পরিবারগুলির প্রথাগত অধিকারগুলির স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।

 

কাওসার রহমান

×