ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এফবিসিসিআই নির্বাচন দাবি

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২১ জুন ২০২৩

সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এফবিসিসিআই নির্বাচন দাবি

অনুষ্ঠান

  • সম্মিলিত ব্যবসায়ীদের পরিষদের প্রস্তুতি
  • পরবর্তী সভাপতি পদে সমর্থন পেলেন মাহবুবুর রহমান 
  • ৩১ জুলাই পরিচালক পদে নির্বাচন 

সিলেকশন নয়, এবার সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এফবিসিসিআই পরিচালক পদের নির্বাচন দাবি করছেন সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি জসিম উদ্দিন নেতৃত্বাধীন এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হতে চলায় আগামী ৩১ জুলাই নতুন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে এফবিসিসিআই। নির্বাচন ঘিরে সারা দেশের ছোট-বড় প্রায় সাড়ে চার কোটি ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। সরকারের সমর্থন থাকায় ইতোমধ্যে পরবর্তী সভাপতি হিসেবে মাহবুবুল আলমের প্রতি পুর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক সভাপতিরা। ওই হিসাবে চট্টগ্রামের শীর্ষ এই ব্যবসায়ী নেতাই আগামী দিনের জন্য এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হতে চলেছেন। 

জানা গেছে,  নির্বাচন না দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে এবারও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে- এই প্রক্রিয়ায় দেশের শীর্ষ ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বরাবরই উপেক্ষিত থাকেন। ফলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা  ও সঙ্কট নিরসনে মূলত এই সংগঠনটির কার্যক্রম ক্রমেই দূর্বল হয়ে পড়ছে। শুধু তদবির ও লবিংয়ের জোরে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদ বাগিয়ে নিয়ে সিআইপি মর্যাদার সুযোগ নিচ্ছেন নামধারী কিছু ব্যবসায়ী নেতা। ফলে খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। এই সঙ্কট উত্তরণে এবার সরাসরি ভোটের দাবি করছেন সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা। সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা বলছেন, সভাপতি পদে সরকার যাকে সমর্থন দিবেন তাঁকেই আমরা সর্বাত্বক সমর্থন ও সহযোগিতা করবো। কিন্তু পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্যথায় খাতভিত্তিক প্রকৃত ব্যবসায়ীরা সংগঠনটিতে আসতে পারবেন না। সম্প্রতি এফবিসিসিআই নির্বাচন নিয়ে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের উদ্যোগে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা লেডিস ক্লাবে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। 

অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ, যার প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ (আহ্বায়ক), মুনতাকিম আশরাফ (যুগ্ম আহ্বায়ক) ও নিজাম উদ্দিন রাজেশ (যুগ্ম আহ্বায়ক)। ভোট প্রশ্নে সাধারণ সদস্যদের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে এবং সাধারণ ব্যবসায়ীদের পাশে থেকে তাদের চলমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। এই পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়- সম্মিলিত পরিষদের ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। ভোট না হলে কে পরিচালক, কে সহসভাপতি আর কে সাধারণ ভোটার- এগুলো চেনা বা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। এখানে সব সদস্যের দাবি ভোট করে যদি হেরেও যায় তাও নির্বাচন করে হেরে যেতে চাই। তবুও নিজের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই।

সম্মিলিত ব্যবসায়ীদের পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-সরাসরি নির্বাচন সংগঠনটির সাধারণ সদস্যদের প্রাণের দাবি। সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা নেতৃত্বে আসতে পারছে না। এটা একটি বড় সঙ্কট। যারা সিলেকশনে নির্বাচিত হয়ে আসেন তাদের কোন দায়বদ্ধতা থাকে না। জিবি মেম্বার বা সাধারণ সদস্যদের তারা চিনেও না। এ কারণে ভ্যাট-ট্যাক্স, আমদানি-রপ্তানি,এলসি খোলা কিংবা অন্যান্য সমস্যা নিয়ে এলে কেউ কারো কথা শুনে না। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যও পিছিয়ে পড়ছে। সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির নেতৃত্বে আনতে আমরা সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ গঠন করেছি। আমরা সরাসরি নির্বাচন চাই। ইতোমধ্যে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন এবার পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচন দেওয়া হবে। এ কারণে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আছি। আশা করছি, নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এফবিসিসিআইতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সংগঠনটির প্রথম সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী জানান, আমরাও সরাসরি নির্বাচনে পক্ষে। করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির চাপ সামলাতে বর্তমান পর্ষদ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অনেক বিষয়ের সমাধানের চেষ্টা করেছে। 

আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশ আয়রণ এবং স্টিল ইম্পোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডায়নামিক মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের সত্বাধিকারী আমির হোসেন নুরানী বলেন, আমি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নির্বাচিত হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে সক্ষম হবো। 

তিনি জানান, বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি জানান, নির্বাচিত হতে পারলে তিনি ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করবেন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন জানান, তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচিত হতে পারলে তিনিও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করবেন। এদিকে এবার নতুন ও তরুণ নেতৃত্বের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভিসতা ইলেক্ট্রনিক্সের পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন লোকমান হোসেন আকাশ। এছাড়া সংগঠনটির সাবেক পরিচালক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন পরিচালক পদে নির্বাচন করবেন। তিনি জানান, ফলমূল ও শাক-সবজি রপ্তানি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচিত হতে পারলে এখাত উন্নয়নে কাজ করবেন।
 
এফবিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে, তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন সকাল ৯টা  থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ শেষে পরিচালক পদে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে এফবিসিসিআই সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ছয়জন সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২ অগাস্ট। পরিচালক পদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ জুলাই। ১৫ জুলাই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর প্রার্থিতা বাতিলের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ জুলাই। একইদিনে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। 

উল্লেখ্য এর আগে ২০১৯ সালে নির্বাচন ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ফেডারেশনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তাও আংশিক। ওই সময় সভাপতি হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। পরিচালক পদেও চেম্বার অংশে ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে পণ্যভিত্তিক সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন অংশে তখন ভোট হয়েছিল। বর্তমানে ফেডারেশনের পর্ষদ ৮০ জনের। এসব পদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে  জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হয়েছেন। বাকি ৪০ পরিচালক পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের। তবে ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন (১৭ জন পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন ও ১৭ জন  জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন) মনোনয়নের মাধ্যমে ভোট ছাড়াই পদ পান। বাকি ৪৬ জনকে সরাসরি সদস্যদের  ভোটে জিতে আসতে হয়।

সভাপতি হচ্ছেন মাহবুবুল আলম ॥  এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এর সভাপতি মো. মাহবুবুল আলমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতিরা। সম্প্রতি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই এর পরবর্তী সভাপতি হিসেবে মো. মাহবুবুল আলমের নাম ঘোষণা করেন তারা।‘ডেভেলপিং স্মার্ট লিডারশিপ টু ক্রিয়েট স্মার্ট ইকোনমি’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এমপি এ ঘোষণা দেন। 

এসময় মঞ্চে উপস্থিত থেকে এফবিসিসিআই এর পরবর্তী সভাপতি হিসেবে মো. মাহবুবুল আলমের প্রতি সমর্থন জানান এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ, সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির, আব্দুল আউয়াল মিন্টু।  

এসময় দাঁড়িয়ে মো. মাহবুবুল আলমের প্রতি সমর্থন জানান উপস্থিত ব্যবসায়ী  নেতারাও। ওই অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থানে এসেছে, সেটা প্রশংসনীয়। বেসরকারি খাতের কারণে এ অবস্থায় আসা সম্ভব হয়েছে। তবে, বর্তমানে ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি এগুলো সারাবিশ্বে আছে। বাংলাদেশেও কিছুটা আছে। এফবিসিসিআই সম্পর্কে তিনি বলেন, এক সময় এফবিসিসিআইতে প্রক্সি ভোটে নেতা নির্বাচিত হতো। এখন সেই পদ্ধতি নেই। এখানে যোগ্যরাই নির্বাচিত হয়ে আসেন। সালমান এফ রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় পর চট্টগ্রাম থেকে নেতা পাচ্ছে এফবিসিসিআই। এজন্য মো. মাহবুবুল আলমকে অভিনন্দন জানান তিনি।

 
×