বাজেটে সামনে রেখে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বৈঠক
দেশের দরিদ্র্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর থেকে পরোক্ষ কর হ্রাস করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশের একজন দরিদ্র্য মানুষও প্রতিদিন গড়ে ৩০ টাকা ভ্যাট গুনছেন। অথচ যার আয় যত বেশি তিনি তত বেশি ভ্যাট ও কর গুনবেন-এটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। দেশে একটি সুশৃঙ্খল কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ‘প্রোমোটিং সিটিজেনস্ পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্প’ এর আওতায় আগামী অর্থবছরের কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বৈঠক করে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় এতে সংস্থা ও প্রকল্প কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা খন্দকার তাহসিন আশরাফি। ওই বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থা অনেকাংশেই পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল, যা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য নয়। কর আদায় এমনভাবে করতে হবে যাতে যার যত বেশি সম্পদ তিনি তত বেশি করদাতা হবেন।
উল্লেখ্য, ‘একটি ন্যায্য ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার’ রূপকল্প নিয়ে বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এ ধারাবাহিকতায় ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর সহায়তায় প্রোমোটিং সিটিজেনস্ পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থাপনা অনেকাংশেই পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল, যা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য নয়। পরোক্ষ করের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দরিদ্রদের প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল, কেননা ভ্যাট সমাজের একটি স্বচ্ছল অংশের তুলনায় দরিদ্র মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ কেড়ে নেয়।
অন্যদিকে, ভ্যাটের কার্যকারিতা সকল শ্রেণির ক্ষেত্রে সমান প্রভাব ফেলে বলে এটি দরিদ্রের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে ধনীদের তুলনায় দরিদ্র মানুষকে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা দরিদ্র ও ধনীর মধ্যে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি করে। এ প্রেক্ষাপটে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর সহায়তায় ‘প্রোমোটিং সিটিজেনস্ পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্প’ কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
প্রকল্প কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন, ক্যাম্পেইন, পলিসি ডায়লগ, বাংলাদেশে কর ন্যায্যতা ও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রকল্পের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সামাজিক বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা ও অনুশীলনকে শক্তিশালী করা এবং সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিদের নিকট থেকে উপযুক্ত পরিমাণ কর আদায়ের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রমে উপযুক্ত পরিমাণ বরাদ্দ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট নীতির সংস্কার করা, উচ্চ স্তরে কর-জিডিপি অনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করা, কর অব্যাহতি কমানো, কর সম্পর্কিত তথ্যের অভিগম্যতা (এনবিআর ডেটা সেন্টার) বাড়ানো, বিনিয়োগ আয় এবং সম্পদের উপর কম হার (যেমন সম্পত্তি, সম্পদ, এবং উত্তরাধিকার) বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি এগুলো প্রগতিশীল ব্যয়ের অর্থায়ন করতে পারে, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংগঠন এবং যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, এবং নাগরিক সমাজ এবং নীতিনির্ধারক উভয় পক্ষের পারস্পরিক মতবিনিময় ও সংলাপের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশগ্রহণমূলক ক্ষেত্র তৈরি করা।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায় কর সম্পর্কে জানাবোঝার মাধ্যমে কর দেওয়ার সংস্কৃতি চালু, এনবিআরের কর আহরণ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাস করে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কর প্রক্রিয়ার সমস্যাবলী চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ, কর প্রক্রিয়া প্রগতিশীল করা, কর পরিশোধের বিপরীতে নাগরিকরা কী পরিষেবা পাচ্ছে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া চালু করা প্রভৃতির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এছাড়াও কর ন্যায্যতার বিষয়ে পরিচালিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো সংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে সকলে পরামর্শ প্রদান করেন।
এম শাহজাহান /এমএস