ডলার
মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের আমদানি দায় বাবদ ১ দশমিক ১ বিলিয়নের ‘আকু(এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন)’ পেমেন্ট শোধ শেষে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) এর পরিমাণ প্রায় ৭ বছর পর ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল। রবিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের লেনদেন বন্ধ থাকায় সোমবার আকু পেমেন্টের নিশ্চয়তা পত্র(কনফারমেশন ভাউচার) পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আকু পেমেন্টের ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
আকু পেমেন্টের পূর্বে রিজার্ভের পরিমাণ গত ২ মে ছিল ৩০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এর পরই আকু পেমেন্ট, অন্যান্য বৈদেশিক দায় পরিশোধ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ ৩০ বিলিন ডলারের নিচে নামল। এর আগে সরবশেষ ২০১৬ সালের ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর একই মোসের ২২ জুন ছিল ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়ে বিবৃতিতে বলেছিল, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে।
এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকলে পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে তা আবার ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০১৪ সালের জুন মাসে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে রফতানি ও রেমিটেন্সে ভর করে ধারাবাহিক উর্ধমূখী প্রবণতা শুরু করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ২২ বিলিয়ন, ডিসেম্বরে তা ২২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এরপর থেকে রিজার্ভ আর পেছন ফিরে তাকায়নি। ২০১৫ সাল শেষে তা ২৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন, ২০১৬ তে ৩১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন, ২০১৭ তে ৩৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮ তে ৩২ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন, ২০১৯ এ ৩২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন, ২০২০ সাল শেষে তা ৪৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন, ২০২১ সাল শেষে ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিন ও ২০২২ সালে ৩৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের শুরু থেকে বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারি দেখা দেয়ায় প্রবাস আয় বাড়তে থাকে বাংলাদেশের। এই সময়ে অনেক প্রবাসীই দেশে ফেরার প্রবণতা দেখা দেয় ও আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় রির্জাভ উল্লম্ফন হতে শুরু করে দেশের।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ২০২১ সালের অগাস্টে ৪৮ দশমিক ০৬ ডলারে পৌঁছায়। যা ছিল ওই সময়ের গড় ৬ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভের এ হিসাব নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশকে ঋণ দাতা সংস্থা আইএমএফ বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন পদ্ধতি অনুসরণ করার। ঋণ চুক্তিতে গিয়ে আগামী মুদ্রানীতিতে রিজার্ভ গণনা বিপিএম৬ পদ্ধতিতেই করার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিপিএম৬ এর পাশাপাশি রিজার্ভের বর্তমান গ্রস তথ্যও প্রকাশ করা হবে।
আইএমএফ এর পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক সম্পদ গণনায় সকল বৈদেশিক দায় ও ঋণ এবং রিজার্ভের অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা মূল রিজার্ভ থেকে বাদ যাবে।
বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভের অর্থে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন ছাড়াও একাধিক তহবিল পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ বিমান ও শ্রীলঙ্কাকে কিছু অর্থ ঋণ দিয়েছে। আবার ইডিএফ ছাড়াও আরো দুটি তহবিল গঠন করে পরিচালনা করছে বৈদেশিক মুদ্রায়। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকা দায় বাদ যাবে। এতে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমে যাবে।
এসআর