ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আমদানি-রপ্তানিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে 

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আমদানি-রপ্তানিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে 

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর

  • সরাসরি পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ ও চায়না 
  • রমজানের ভোগ্যপণ্য দ্রুত ছাড়করণ হচ্ছে

পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। রোজার ভোগ্যপণ্যের বেশিরভাগ আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এ বন্দর। 

বিশেষ করে ইউরোপ ও চায়নার সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু করে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করা হচ্ছে। এর ফলে বন্দরের কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এর প্রবৃদ্বি বেশ আশাব্যঞ্জক। 

বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্বের কারণে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার মধ্যে এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিপিং জার্নাল লয়েড’স লিস্টের  ২০২২ সালের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকা ৬৪ তম অবস্থান অর্জন করেছে। 

বিগত বছরের তুলনা আরো ৩ ধাপ এগিয়ে গেছে। সরকারের চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত সাম্প্রতিক  এক নথি থেকে বিশ্বব্যাপি মহামন্দার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি উঠে এসেছে। 

অন্যদিকে আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) গত ২০২১-২২ (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুললায়  মোংলা পোর্টের মুনাফা কমেছে ১১ লাখ টাকা। তবে জাহাজ হ্যান্ডেলিং ৭ শতাংশ বাড়লেও কন্টেনার হ্যান্ডেলিং ২৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। কার্গো হ্যান্ডেলিং ৭ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক একটি প্রতিবেদন অর্থবিভাগে পাঠানো হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে চলতি অর্থবছরের মধ্যে বন্দরের রাজস্ব আয় ও মুনাফা বাড়বে। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।
       
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর সংক্রান্ত আরেকটি নথিতে বলা হয়েছে-এ বন্দরের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা বর্ধিতকরণ,পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ , কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং ,পাইরেসি শূণ্যে পর্ষায়ে নিয়ে আসা এবং লালদিয়া চর অবৈধ দখল মুক্তকরন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে বাণিজ্যিক পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর হতে চায়না ও ইউরোপের বেশ কযেকটি বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ পরিচালনা চালু ফলে পণ্য পরিবহনের হাব পোর্টগুলোর উপর নির্ভরতা কমানো সহ পরিবহনের সময়কাল হ্রাসের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানিকারকের খরচ হ্রাস পাবে। দুই মহাদেশের সাথে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমান ও সুযোগ  বেড়ে যাবে। 

শুধু তাই নয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্বের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া বিবিধ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম বন্দর বিগত অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং এ ৩ভাগ ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এ ৪ ভাগ প্রবৃদ্বি অর্জন করেছে । বিশ্বের অধিকাংশ বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর মাত্র ব্যাপকহারে হ্রাস পেলেও চট্টগ্রাম বন্দর ৩ মিলিয়ান মার্কিন ডলার ক্লাবে অবস্থান ধরে রেখেছে।
 
এদিকে বিগত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩.১৪ মিলিয়ান কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে প্রবৃদ্ধি ভালো। বিশেষ করে দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে সরকারের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি জানান, এছাড়া পায়রা বন্দর উন্নয়নে নজর দিয়েছে সরকার। নির্মিত হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। সবকিছু মিলিয়ে বন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা বর্ধিতকরণ করার জন্য নিউমুরিং ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এই ইয়ার্ড প্রায় ৯০ হাজার ৫২১ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং ইয়ার্ডে প্রায় ৪০০০ টিইইউস ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন কন্টেইনার রাখা সম্ভব। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে ৪৯ হাজার ১১৮ টিইইউস হতে বৃদ্বি পেয়ে ৫৩,৫১৮ টিইইউস এ উন্নীত হয়েছে। 

ফলশ্রুতিতে বন্দর আগমনকারী জাহাজসমূহ দ্রুততার সাথে তাদের কন্টেইনার নামিয়ে পরবর্তী গন্তব্য যেতে পারছে এবং বিভিন্ন শিপিং লাইনগুলো বন্দরের উপর কোন ধরনের অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করতে পারছে না। ফলে সামগ্রিকভাবে পণ্য আমদানি খরচ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্য দ্রুত আমদানি ও তা ছাড়করণে ভূমিকা রাখছে এই বন্দর।  রমজান মাস সামনে রেখে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভোগ্য ও নিত্যপণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

এ কারণে চাল, গম, চিনি, ডাল, ছোলা, মসলা ও নানা ধরনের ফলমূলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে চট্টগ্রাম বন্দরের  বড় ভূমিকা রয়েছে। রমজানে ব্যবহার হয় এমনসব ভোগ্যপণ্য আমদানি ও তা দ্রুত ছাড়করণে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হউন সেজন্য বন্দর সংশ্লিষ্টদের প্রতিও নির্দেশনা রয়েছে। 

অন্যদিকে এ বন্দর লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিপিং জার্নাল লয়েড লিষ্টের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় ৬৪ তম অবস্থান অর্জন করেছে। বিগত বছর অবস্থানের তুলনায় আরো ৩ ধাপ এগিয়ে গিয়ে করোনা পরবর্তী বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে চট্রগ্রাম বন্দর তার অবস্থান আরো দৃঢভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের কাষ্টমসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে পুরাতন ডিজি কার্গোগুলো বন্দর প্রাঙ্গন হতে অপসারনের মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুকি অনেকাংশে হ্রাস করা হয়েছে।  বর্তমানে চট্টগ্রামে বন্দরে ৭০ শতাংশ কন্টেইনার জাহাজ সরাসরি এসেই বার্থে অবস্থান নিতে পারছে।  এছাড়া ইউরোপের কোনো দেশে প্রথবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি জাহাজ যাত্রাকে যুগান্তকারী উল্লেখ করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে করে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়বে। 
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×