বিনিময়
বিকাশ থেকে রকেটে, টাকা যাবে নিমেষে। এমন দিন শিগগির আসছে। শুধু বিকাশ-রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) নয়, যেকোনো ব্যাংক থেকে এমএফএসে বা এমএফএস থেকে ব্যাংকে তাৎক্ষণিক টাকা স্থানান্তরের সুযোগ চালু হচ্ছে।
এ জন্য ভারতের ইউনাইটেড পেমেন্ট ইন্টারফেসের (ইউপিআই) আদলেই হচ্ছে দেশের ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি), যা বিনিময় নামে পরিচিত হবে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সেবা চালুর মাধ্যমে দেশে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
আগামী রবিবার নতুন এ সেবা চালু হবে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে ১৩ নভেম্বর। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্প ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে বিনিময়। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা।
এই সেবার আওতায় যেকোনো ব্যাংক থেকে এমএফএসে বা এমএফএস থেকে ব্যাংকে তাৎক্ষণিক টাকা স্থানান্তরিত হবে।
আপাতত টাকা স্থানান্তরে গ্রাহকদের কোনো মাশুল গুনতে হবে না। পরবর্তী সময়ে এই সেবার মাশুল নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সরকারি সেবা হওয়ায় মাশুল হবে কম। আর সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাশুল নিলেও আইডিটিপি কোনো খরচ নেবে না।
এর আগে সব প্রস্তুতি নিয়েও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির পারস্পরিক লেনদেনের প্রক্রিয়া, অর্থাৎ এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠানোর সেবা চালু করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
কারণ, তখন এতে যুক্ত হয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ। নেওয়া হয় নতুন সরকারি প্রকল্প। তখন ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের (এনপিএসবি) মাধ্যমে বিকাশ টু রকেট, বিকাশ/রকেট টু ব্যাংক—এভাবে টাকা স্থানান্তরের সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবাটি চালুর কথা ছিল। সে সময় এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর চালু হয়নি।
তবে এখনই সব ব্যাংক, এমএফএস ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ‘বিনিময়ে’ যুক্ত হচ্ছে না। আপাতত সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংক এ সেবায় যুক্ত হচ্ছে।
এ ছাড়া এমএফএসে হিসেবে থাকছে বিকাশ ও রকেট। এ ছাড়া পিএসপি হিসেবে যুক্ত হচ্ছে প্রগতি সিস্টেমের টালিপে। ধীরে ধীরে সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এমএফএস ও পিএসপি এই সেবায় যুক্ত হবে।
বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, এই প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের ফলে গ্রাহকেরা তাঁদের লেনদেনে আরও সক্ষমতা অর্জন করবেন। সহজে লেনদেন সুবিধা পাবেন।
যেভাবে কাজ করবে ‘বিনিময়’
শুরুতেই বিনিময় নামে ভিন্ন কোনো অ্যাপ তৈরি হচ্ছে না। বিনিময় একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক, এমএফএসের অ্যাপে যুক্ত হবে। বিনিময় ব্যবহার করতে চাইলে গ্রাহককে নিবন্ধন করতে হবে।
নিবন্ধনের পর গ্রাহকের নামের পরে@binimoy.gov.bd যুক্ত হয়ে একটি আইডি তৈরি হবে। নিবন্ধন শেষ হলে গ্রাহক দুটি অপশন দেখতে পাবেন ‘সেন্ড মানি’ ও ‘রিসিভ মানি’।
গ্রাহক যদি কাউকে টাকা পাঠাতে চান, তখন সেন্ড মানি অপশনে গেলে নিজের যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট আছে, তা থেকে একটি বেছে নিতে হবে। এবার যাঁকে পাঠাবেন, তাঁর মুঠোফোন নম্বর বা ইতিমধ্যে যদি ওই ব্যক্তির বিনিময়ে আইডি থাকে, সে আইডি নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো যাবে। আর যাঁকে টাকা পাঠানো হলো, তিনি ‘রিসিভ মানি’ অপশনে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নম্বরে টাকাটা গ্রহণ করতে পারবেন।
প্রথম পর্যায়ে বিনিময়ে শুধু লেনদেন করা যাবে বলে জানান আইডিয়া প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মোস্তফা সাজ্জাদ হাসান। তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে বিনিময় অ্যাপ হবে। এরপর ধাপে ধাপে মেট্রোরেলের ভাড়া, টোল দেওয়া, এনবিআরের সেবা ও বিভিন্ন পরিষেবা বিল যুক্ত হবে।
আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, আর্থিক খাতে খুব ভালো একটি সেবা চালু হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এর পরিসর আরও বাড়বে।
খরচ কত, সম্ভাবনা কী
শুরুতে বিনিময়–এর জন্য খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। পরে খরচ বেড়ে হয় ৬৫ কোটি টাকা। মূলত চারটি প্রতিষ্ঠান এ প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করে। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ওরিয়ন ইনফরম্যাটিকস লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড, ফিনটেক সল্যুশন লিমিটেড ও সেইন ভেঞ্চারার্স লিমিটেড (জেভি)। এর মধ্যে ওরিয়ন ইনফরম্যাটিকস লিমিটেড ও ফিনটেক সল্যুশন লিমিটেড রক্ষণাবেক্ষণ সেবা দিয়ে যাবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ইতিমধ্যে ব্যাংক ও এমএফএসগুলো যেভাবে নিজেদের প্রযুক্তির উন্নয়ন করে নতুন নতুন সেবা চালু করেছে, তাতে বিনিময়কে এগোতে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
এমএস