ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫৩৮ শ্রমিকের

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫৩৮ শ্রমিকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত এক বছরে সারাদেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আগের বছর ২০২০ সালে ৩৭৩ টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মোট ৪৩২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপ থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জরিপে দেখা যায়, বিগত ১ বছরে (১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১) সারাদেশে ৩৯৯টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। অথচ করোনা মহামারীর ২য় বছরে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাধারন ছুটিসহ বিধি-নিষেধে অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারেনি, তার পরও কর্মদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরে সবচেয়ে বড় কর্মদুর্ঘটনা ছিল রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা যেখানে ৫২ শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। এছাড়া সোয়ারীঘাটে রোমানা রাবার কারখানায় অগ্নিকান্ডে ৫ জন এবং বগুড়ার সান্তাহারে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। মোট ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) পর্যবেক্ষণ করে বছর শেষে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যেসকল শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাহিরে অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় অথবা অন্য কোন কারনে মারা গিয়েছেন তাদের এই জরিপের মধ্যে অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে, যাদের সংখ্যা মোট ১৫০ জন, এর পরেই রয়েছে নির্মাণ খাত এই খাতে নিহত হয়েছে ১৩৮ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ১১২ জন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৮৬ জন, এবং কৃষি খাতে এই সংখ্যা ৫২ জন। মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮২ জন; আগুনে পুড়ে ৭২ জন; ছাদ, মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে ৫৮ জন; বজ্রপাতে ৪৯ জন; শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩২ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন; পাহার বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ২৭ জন; বয়লার বিস্ফোরণে ২৩ জন। এছাড়া পানিতে ডুবে ৯ জন শ্রমিক নিহত হয়। এসআরএস এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, করোনার দ্বিতীয় বছরটিও শ্রমজীবীদের জন্য সুখের ছিল না। করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও তাদের কাজ করতে হয়েছে। যদিও করোনার কারণে দীর্ঘ সময় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বিশেষ করে পরিবহন, নির্মাণ শ্রমিকদের কোন কাজ কর্ম ছিল না। সবকিছুর ক্ষেত্রে একধরনের অচল অবস্থা বিরাজ করেছে, তাই বলে কর্ম-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে মালিকদের অবহেলা এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যথাযথ পরিদর্শনের ঘাটতি কর্মদুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শ্রমজীবীর জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাদের সুরক্ষার জন্য শ্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন হতে হবে এবং এক্ষেত্রে যেকোন ব্যয়কে বিনিয়োগ মনে করতে হবে। জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপোরোয়া যান চলাচল ইত্যাদি হল পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ। কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া যেমন- ভেজা হাতে মটর চালু করা, মাথার ওপরে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড উঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিকালে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতের পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছে কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা, কারখানায় ভবনে জরুরী বর্হিগমন পথ না থাকা, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষন না দেওয়া ।
×