ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সরবরাহ ঠিক রাখতে চালের মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১০ জানুয়ারি ২০২১

সরবরাহ ঠিক রাখতে চালের মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মৌসুমভিত্তিক চাল ডালসহ নিত‌্যপণ‌্যের মূল‌্য নির্ধারণ করে দেওয়ার জন‌্য কৃষিপণ‌্য মূল‌্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এই মুহূর্তে বাজারে চাল সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারের মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে আমদানি করতে হবে দ্রুত। কারণ আমন মৌসুমের পর আগামী ৩ থেকে ৪ মাসে কোনো ধানের মৌসুম নেই। রবিবার (১০ জানুয়ারি) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিভিন্ন গবেষক, মিল মালিক, চাল রফতানিকারক, কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা যুক্ত ছিলেন। ভারতে এই পদ্ধতি খুব কাজে দিয়েছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক বা গবেষকের মতামতের ওপর নির্ভর না করে প্রকৃত উৎপাদকের সঙ্গে এবং বাজারসংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে কৃষিপণ‌্য মূল‌্য কমিশন গঠন প্রয়োজন। একটি এগ্রিকালচারাল প্রাইস কমিশন গঠন করা দরকার, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্ষেপণ দিতে পারে। একই সঙ্গে মধ‌্যমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী দাম নির্ধারণ করবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘চালের দামের ক্ষেত্রে নজরদারির প্রয়োজনীয় রয়ে গেছে। কৃষির উন্নতি হয়েছে, কিন্তু কৃষকের তো সেভাবে উন্নতি হলো না। সরকারের মজুদ কম। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো মজুদ নেই। সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা কম, লটারির মাধ‌্যমে সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু অনেকেই বঞ্চিত হন। এছাড়া সঠিক সময়ে চাল আমদানি হয়নি। এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া যেতো।’ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘এবার আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে আমন উৎপাদনের সঠিক সিদ্ধান্ত আসেনি। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। এসব কারণে বাজারে চালের দাম কিছুতেই কমছে না। এছাড়া চালের বাজারে বড় বড় কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রবেশ করায় তারা মজুদ করে রেখেছে। ছোট ছোট মিলাররা নানা সমস‌্যায় জর্জরিত। ফলে চালের বাজারে সিন্ডিকেটও রয়েছে।’ বিশিষ্টজনরা বলেন, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ ছাড়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ধানের উৎপাদনের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না অভিযোগ করে মিল মালিকরা বলছেন, এবার আমনের ফলন কম হয়েছে, তারওপর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সরকারের আমদানি সিদ্ধান্তের পরও চাল আনতে দেরি কেন করা হলো প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। মৌসুমের শুরুতে আমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো ঘাটতি থাকবে না এমন তথ্য দেওয়া হলেও মৌসুম শেষে বলা হচ্ছে উৎপাদন কম হয়েছে। বিআরআরআই বলছে, ১৫ লাখ টন উৎপাদন কম হতে পারে। তবে, আউশ, বোরো মিলিয়ে মৌসুম শেষে বছরের জুন মাস নাগাদ এ ঘাটতি কাটিয়ে আরও ৩০ লাখ টন উৎপাদন বেশি হবে। কিন্তু আমনের উৎপাদন কমার প্রভাব রাতারাতি পড়েছে চালের বাজারে। দফায় দফায় দাম বেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত লাগাম টানতে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেখানেও কারসাজি বন্ধে শুধু নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকেই আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদানির ঘোষণায় দামের উর্ধ্বগতি কিছুটা থামাতে পারলেও ততদিনে কৃষকের গোলার ধান বিক্রি শেষ। অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা বলছেন, এবারো আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন করে লাভ করতে পারেননি তারা। অনেকেই এবার ধানের বদলে সবজি চাষ করেছেন। উৎপাদন ও সংরক্ষণে সরকারের স্বল্প সুদে বিশেষ কৃষিঋণের দাবি জানান কৃষকরা। আর অভিযোগ করেন চাষাবাদে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতারও। চালের দামের উর্ধ্বগতিতে বরাবরই অভিযোগের তীর মিল মালিকদের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ অটো রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, যে পরিমাণ ধান সংগ্রহ করার কথা সে পরিমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি মিল মালিকরা। ধানের দাম ও সংগ্রহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে মৌসুমী ফড়িয়ারা। তারওপর বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ কম সুদে দেশি বিদেশি ঋণ নিয়ে চালের ব্যবসায় ঢুকে পড়ায় ছোট মিল মালিকরা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইস্টিটিউটের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান, চ‌্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা বক্তব‌্য রাখেন।
×