অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘মানুষের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ উপার্জনের সুযোগের সীমাবদ্ধতা। এই বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে দেশের শীর্ষ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) দরিদ্র বা অতি দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে জীবিকায়নের সুযোগগুলো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ বুধবার পিকেএসএফ আয়োজিত ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও, ভূতঃপূর্বডিএফআইডি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ অর্থায়নে পিকেএসএফ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পাথওয়েজ টু প্রসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল (পিপিইপিপি) প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারের সভাপতি হিসেবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, এফসিডিও-এর ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টও জুডিথ হার্বাটসন এবং ইইউ হেড অব ডেলিগেশন মারিজিও চ্যান বিশেষ অতিথি হিসেবে এতে অংশ নেন।
সংক্ষেপে ‘প্রসপারিটি’ নামে পরিচিত ছয়-বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে ২.৫ লাখ অতি দরিদ্র খানাভুক্ত ১০ লাখ মানুষের অতি দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করবে। গত এপ্রিল ২০১৯-এ শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাংলাদেশের দারিদ্র্য পীড়িত ১৫টি জেলার ৪৩টি উপজেলাভুক্ত প্রায় ২০০টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের কর্ম এলাকা হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারি; দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, পটুয়াখালী ও ভোলা; এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকাভুক্ত জেলা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জকে নির্বাচন করা হয়েছে। জলবায়ুজনিত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব জেলায় বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে।
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেও আশা ও বিশ্বাসন, প্রসপারিটি প্রকল্পটি জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং বাংলাদেশ সরকার গৃহীত ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
প্রকল্পটি প্রথম বছর ৩০,০০০-এর বেশি অতি দরিদ্র খানাকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকায়ন ও পুষ্টি সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে লক্ষিত ১০ লাখ মানুষের দোড়গোঁড়ায় প্রকল্পের সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমি জেনে আনন্দিত যে, দারিদ্র্য ও দারিদ্র্যের কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রসপারিটি প্রকল্পের বহুমাত্রিক কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে সৃষ্ট খাদ্য সংকট ও উপার্জনের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০,০০০ মানুষকে মোট ৩১ কোটি টাকা জরুরি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকালে এফসিডিও প্রতিনিধি জুডিথ হার্বাটসন ও ইইউ প্রতিনিধি মারিজিও চ্যান দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসের এ প্রচেষ্টায় অংশ গ্রহণ অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।