বসন্তের শেষ সময়ে সবুজবেষ্টিত ভাওয়াল গাজীপুরের গজারি বনে ফুল ফুটেছে। সাদা মেঘের মতো অপরূপ ফুলের সমারোহ। ১৯৭০ সালের এই সময়েই গাজীপুরে এ দেশের ‘শিল্প বাগানে’ সমরাস্ত্র কারখানা নামে প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রথম সুরভিত ফুল ফুটেছিল। বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, (বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি-বিওএফ) বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশের সামরিক, আধা সামরিক ও সহায়ক বাহিনীর জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি তৈরি করে থাকে।
পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ১৯৬৮ সালে গাজীপুর সেনানিবাসে একটি সমরাস্ত্র কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়। এই দেশের মেধাবী সন্তান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহুর-উল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ এপ্রিল ১৯৭০ সালে উদ্বোধন করা হয়। গাজীপুর জেলার চতর মৌজার ৩০৩ একর জমির ওপর কারখানা এবং আবাসিক এলাকা নিয়ে সমরাস্ত্র কারখানা স্থাপিত। তৎকালীন সময়ে শুধুমাত্র রাইফেল এবং এর কার্তুজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এই কারখানা স্থাপিত হলেও বর্তমানে এখানে আর্টিলারি শেল এ্যাসেম্বলি কারখানা, গ্রেনেড তৈরির কারখানা এবং পূর্ববর্তী পুরাতন রাইফেলের মডেল পরিবর্তন করে আধুনিক রাইফেল তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। চলছে নতুন নতুন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যুগোপযোগী সরঞ্জামাদি তৈরির অবিরাম কর্মযজ্ঞ।
বিওএফ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড’ কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছিল। তবে ৪ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সাল থেকে কারখানাটি সরাসরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ব্রিগেডিয়ার এম করিম উল্লাহ ছিলেন এই কারখানার প্রথম পরিচালক।
দীর্ঘকাল থেকেই বাংলাদেশের এই অঞ্চলে একটি সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার অন্যতম দাবি ছিল সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে তার ঐতিহাসিক ৬ দফায় পূর্বপাকিস্তানে একটি সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি করেন। ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের বিখ্যাত ১১ দফায়ও সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়। সম্ভবত পৃথিবীর অন্য কোন সমরাস্ত্র কারখানা প্রতিষ্ঠার দাবি এমন জনপ্রিয় গণদাবিতে পরিণত হয়নি। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত ও আব্দুল মমিন, প্রচার সম্পাদক পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রচারিত ছয় দফার একটি ব্যাখ্যা দেশব্যাপী বিলি করা হয়। ৬ দফার ওই প্রচারপত্রে ৬ষ্ঠ দফার এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন...‘পূর্বপাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা ও নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করতঃ এ অঞ্চলকে আত্মরক্ষায় আত্মনির্ভর করার দাবি একুশ দফার দাবি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বার বছরেও আমাদের একটি দাবিও পূরণ করেন নাই...। মাত্র সতের দিনের পাক-ভারত যুদ্ধই কি প্রমাণ করে নাই আমরা কত নিরুপায়? শত্রুর দয়া ও মর্জির ওপর তো আমরা বাঁচিয়া থাকিতে পারি না ...। সঙ্গে সঙ্গে এও চাই যে, কেন্দ্রীয় সরকার পূর্বপাকিস্তানকে এ বিষয়ে আত্মনির্ভর করবার জন্য এখানে উপযুক্ত পরিমাণ দেশরক্ষা বাহিনী গঠন করুন। অস্ত্র কারখানা স্থাপন করুন। নৌ-বাহিনীর দফতর এখানে নিয়া আসুন’। বঙ্গবন্ধুর সমর দর্শন, প্রতিরক্ষা চিন্তা ও দূরদর্শিতার কথা ভাবলে আজও বিস্মিত হতে হয়।
সূচনালগ্নে চীন থেকে পাওয়া প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে এই কারখানা চালু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ থেকে আনা প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হলে পুরোদমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি শুরু হয়। বর্তমানে এই কারখানা প্রচলিত এবং উন্নত শিল্পমান সম্পন্ন কম্পিউটার চালিত পদ্ধতির মিশ্রণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি করে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার অবদান অবিস্মরণীয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিওএফ এ কর্মরত বেশকিছু সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন। ২৬ মার্চের পর সমরাস্ত্র কারখানার মুক্তিযোদ্ধারা কারখানার অভ্যন্তরে বিদ্রোহ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের দখলে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। ২৮ মার্চ কারখানার স্বাধীনতাকামী কর্মচারীরা রাইফেল তৈরির প্রধান কারখানা দখলে নিয়ে সবগুলো স্বয়ংক্রিয় চাইনিজ রাইফেল ও গোলাবারুদ করায়ত্ব করে সশস্ত্র সংগ্রামীদের মাঝে বিতরণ করেন। এ যুদ্ধে বিওএফ এর ৩০ কর্মকর্তা/কর্মচারী শহীদ হন।
১৯৭১ এর ১৯ মার্চ পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে। হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে এখানেই প্রথম গর্জে ওঠে বীর বাঙালীর অস্ত্র, যা পরবর্তীকালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ১৯ মার্চ ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের সৈন্যদল কর্তৃক জয়দেবপুরের রাজবাড়ীর বাঙালী ইউনিট ২ ইস্ট বেঙ্গলের অস্ত্র জমা নেয়াকে কেন্দ্র করে জয়দেবপুরে হাজার হাজার মানুষের ব্যাপক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এলাকার তিনটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মেশিন টুলস, ফ্যাক্টরী, ডিজেল প্ল্যান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীরা মিছিল করে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। রাজবাড়ীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাজার বটতলায় মুখোমুখি অবস্থানে থাকা পাকিস্তানী বাহিনী এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশে গুলি ছুড়লে জনতার মধ্যে থেকেও পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। বাঙালীদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা সেটাই প্রথম। ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দেশপ্রেমিক অফিসার ও সৈনিকগণ পরোক্ষভাবে ও কৌশলে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে স্বাধীনতাকামী জনতার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা গুলিবর্ষণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সমরাস্ত্র কারখানার দেশপ্রেমিক ও সাহসী সদস্য সৈয়দ এ কে এম মনিরুজ্জামান। বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমসমূহ জয়দেবপুরের প্রতিরোধ সংগ্রামের সংবাদ প্রচার করেছিল। ২০ মার্চ প্রকাশিত দেশের সকল সংবাদপত্রে এ সশস্ত্র সংগ্রামের সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং সারাদেশে স্লোগান ওঠে-‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।
স্বাধীনতার পর একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ফ্যাক্টরি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু-সরকার বিওএফের প্রতিষ্ঠাতা-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহুর-উল ইসলামকে বিওএফের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। পরবর্তীতে কীর্তিমান সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার আব্দুল কুদ্দুসকে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে ধীরে ধীরে স্বাধীন বাংলাদেশে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি চালু হয়। ১৯৭৬ সালে পুনরায় চীনা বিশেষজ্ঞ দল আসে এবং তাদের কারিগরি সহায়তায় ১৯৭৭ সালে ফ্যাক্টরিতে পূর্ণাঙ্গরূপে উৎপাদন শুরু করে।
বিওএফে উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সামগ্রী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে। কারখানায় উৎপাদিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশের পরনির্ভরশীলতা বহুলাংশে কমিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল সদস্য এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় দুই সহ¯্রাধিক পরিবারের জীবিকা নির্বাহ সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি দেশের সরকারী, বেসরকারী ও অন্যান্য শিল্প কারখানার ন্যায় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদান রাখছে। বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টসমূহ বৈদেশিক মিশনে বিওএফে উৎপাদিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করছে; ফলে সরকার জাতিসংঘ হতে রিইমবার্সমেন্ট পাচ্ছে। সেনাবাহিনী ছাড়াও প্রতিরক্ষা খাতের অধীনে বিভিন্ন বাহিনীতেও বিওএফ কর্তৃক উৎপাদিত অস্ত্র-শস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাও বিওএফে তৈরিকৃত অস্ত্র ব্যবহার করছে। কারখানায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কারিগরগণ তাদের মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে কারখানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন মেশিন মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ তৈরি করে থাকেন যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এই কারখানাকে কেন্দ্র করে বেশকিছু সহায়ক শিল্পও গড়ে উঠেছে। এই কারখানার কাজে সংযুক্ত থাকতে পেরে দেশের অন্য প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানগণ দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে ও তাদের প্রযুক্তিগত বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিছু উদ্যামী কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিওএফের দক্ষ কারিগরদের দ্বারা বেশকিছু গবেষণামূলক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং সফলতার সঙ্গে পরীক্ষামূলক ফায়ার সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিওএফে একটি শক্তিশালী রিচার্স এ্যান্ড ডেভেলোপমেন্ট (আরএন্ডডি) এর সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা সম্ভব হয়। এখানে উল্লেখ্য, আরএন্ডডি’র মাধ্যমে কোন অস্ত্র বা সরঞ্জামাদি উন্নয়ন করলে তুলনামূলকভাবে অনেক কম মূল্যে দেশে (বিদেশী) টেকনোলজি ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়।
বিওএফের মূলমন্ত্র হলো-‘সমর সম্ভারে করিব স্বনির্ভর’। বিওএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহে সক্ষমতা এবং এক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্য রফতানি করার জন্যও তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি বিওএফ তার উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিদেশে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, কিছু সংখ্যক দেশ/প্রতিষ্ঠান বিওএফে উৎপাদিত অস্ত্র গোলাবারুদ আমদানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এই সমরাস্ত্র কারখানাটি দেশের এমনই এক অনন্য প্রতিষ্ঠান যেখানে সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ চমৎকার মেল বন্ধনে আবদ্ধ থেকে কাজ করেন। বিওএফ সদস্যদের জন্য সুরক্ষিত ক্যাম্পাসে রয়েছে চমৎকার শপিং সেন্টার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কল্যাণ এবং বিনোদনমূলক সুবিধাদি। সমরাস্ত্র কারখানার সবুজ চত্বর জুড়ে আছে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক, উদ্যান, নয়নাভিরাম গল্ফ কোর্স, সুন্দর লেক, ঝুলন্ত সেতু, বৃক্ষরাজি এবং পাখি ও জীবজন্তু মিলে শ্যামলিমা ঢাকা এক স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এই পরিবেশে মনের প্রশান্তি, পরিবেশের নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে প্রফুল্ল চিত্তে বিওএফের সকল সদস্য নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। কারখানার কয়েকশ’ নারী সদস্য অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরিতেও দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণাময় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
একটি আধুনিক যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত প্রতিরক্ষা নীতি-২০১৮ এর আলোকে সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে কাজ করছে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে সেনাবাহিনী ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্তমানে সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ ও ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের নিমিত্তে সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী অস্ত্র উৎপাদন, ক্ষুদ্রাস্ত্র ও গোলাবারুদে স্বনির্ভরতা অর্জন এবং বিশ্বউন্নয়ন ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিওএফে বিভিন্ন প্লান্ট/প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিওএফ আধুনিক অস্ত্র গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি তৈরির বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (ইন্ডাস্ট্রি ৪.০) দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এর সঙ্গে তাল মিলাতে বিওএফও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ গত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে বিওএফ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনী প্রধান বিওএফের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে তার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী (২৪ মার্চ হতে ৩১ মার্চ ২০১৯) অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ মার্চ সমরাস্ত্র প্রদর্শনী ২০১৯ এর শুভ উদ্বোধন করেন এবং এক পর্যায়ে তিনি বিওএফের স্টলটি ঘুরে দেখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে উৎপাদিত অস্ত্র-গোলাবারুদের পাশাপাশি আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরির কার্যক্রম গ্রহণের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষর্থীসহ হাজার হাজার সাধারণ দর্শক আগমন করে। সকলেই বিপুল আগ্রহের সঙ্গে বিওএফের স্টল ঘুরে দেখেন। স্টলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বিওএফ পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি অত্যন্ত অনুপ্রেরণাময় ঘটনা।
কারখানাটি বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা পূরণ ও সরবরাহের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার সকল সদস্য এই সংস্থার উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এই কারখানার সদস্যগণ এই কারখানাকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিরক্ষা শিল্প হিসেবে রূপান্তরের জন্য নিবেদিত প্রাণে কাজ করে যাচ্ছে। এই অনন্য প্রতিষ্ঠানটি দেশমাতৃকার প্রতিরক্ষায় নিরলসভাবে অবদান রাখছে। বিগত ৪৯ বছরের সকল প্রাপ্তি এবং অর্জনকে পুঁজি করে অতীতের চ্যালেঞ্জ, সীমাবদ্ধতা-ব্যর্থতাগুলো আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে যথাযথ শিক্ষা নিয়ে এই কারখানাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিওএফের সকল সদস্য একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অন্যান্য শিল্পের মতো প্রতিরক্ষা শিল্পেও এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন বাংলাদেশের।
দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশ
কৌশলগত দিক বিবেচনায় একটি স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ দেশের জন্য দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের (ইনডিজিনিয়াস ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি) বিকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিহাস শিক্ষা দেয়, একটি দেশের সঙ্কটকালে/যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অনেক সময় পরীক্ষিত বন্ধু দেশসমূহও অস্ত্র/গোলাবারুদের জরুরী সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে না। কৌশলগত ও বাজেট ঘাটতির কারণে কোন কোন দেশ পুরনো হওয়া প্রযুক্তির ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়। অত্যাধিক আমদানি নির্ভরতা যুদ্ধ/সঙ্কটকালে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নির্দিষ্ট কিছু অতিপ্রয়োজনীয় অস্ত্র/গোলাবারুদ সরঞ্জামাদির (মিলিটারি হার্ডওয়্যার) ক্ষেত্রে দেশীয় স্বনির্ভরতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই দেখা যায় কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেপালের মতো দেশও নিজস্ব সমরাস্ত্র কারখানা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত ও ম্যানুফ্যাকচারিং সক্ষমতা/মানবিবেচনা করে এখনই হয়তো স্থানীয়ভাবে খুবই উন্নতমানের সমরাস্ত্র (মিলিটারি হার্ডওয়্যার) উৎপাদন আশা করা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিফেন্স প্রোডাক্ট উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন প্রয়োজন। বিওএফ ছাড়াও বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি লিমিটেড, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড, বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু এ্যারোনোটিক্যাল সেন্টার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন করছে এবং আংশিকভাবে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে। এগুলো পুরোপুরি শিল্প আকারে বিকশিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাস্ত্র ও ক্ষুদ্রাস্ত্র গোলাবারুদ, স্টোর ও ক্লোদিং আইটেম, ওষুধ ও কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি উৎপাদনে মোটামুটি স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে (মিলিটারি ও হার্ডওয়্যার) অধিকাংশ সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে।
সাম্প্রতিকালে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিশেষত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অবনতিশীল পরিস্থিতি, বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক আধুনিকায়ন ও শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিবেচনা করে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশের উদ্যোগ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত জাতীয় উৎপাদন নীতিমালা। প্রয়োজন উন্নতমানের সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে (ডিফেন্স রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলোপমেন্ট অর্গানাইজেশন) ও পাকিস্তানে (ডিফেন্স সায়েন্স অর্গানাইজেশন) এই ধরনের উন্নতমানের সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশ প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যাপক স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ যে, স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশে সেই সময়ের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান সংস্থা’ (ডিফেন্স সায়েন্স অর্গানাইজেশন-ডিএসও) নামে একটি সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে ফিরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য কম্ব্যাট ইউনিফর্ম (পোশাক) চালু করার কথা বলেন। লে. কর্নেল এস এ এম খালেদের নেতৃত্বাধীন ডিএসওর একটি দল সেনাবাহিনীর উপযোগী কম্ব্যাট পোশাক উন্নয়ন করেন। ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের এক প্লাটুন সৈনিককে উন্নয়নকৃত কম্ব্যাট ইউনিফর্ম পরিয়ে গণভবনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হয়। তৎকালীন খাকি ইউনিফর্মের বিপরীতে কম্ব্যাট ইউনিফর্ম শোভিত স্মার্ট সৈনিক দল দেখে বঙ্গবন্ধু মুগ্ধ হন ও বিষয়টি অনুমোদন করেন। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে ডিএসও প্রধানকেও পুরস্কৃত করেন। ১৯৯৯ এর এক বসন্তের সন্ধ্যায়, ঢাকা সেনানিবাসে নিজ বাসভবনে কর্নেল খালেদ এই লেখককে রোমাঞ্চকর এই ঘটনাটির বর্ণনা করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় টেস্ট এ্যান্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে উন্নয়নকৃত কম্ব্যাট পোশাক ১৯৮০ দশকের প্রথমদিকে সেনাবাহিনীতে চালু করা হয়। ১৯৮০ এর দশকে এই ‘প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান সংস্থা’কে বিলুপ্ত করা হয়।
বর্তমান বাস্তবতার আলোকে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়/আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের অধীনে একটি প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ ডিফেন্স রিসার্চ অর্গানাইজেশন) গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা অস্ত্র বা সরঞ্জামাদির প্রটোটাইপ (মূল নমুনা) তৈরি করবে এবং পরবর্তীতে সমরাস্ত্র কারখানায় বা অন্যকোন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই প্রোডাক্ট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনেক মেধাবী বাঙালী বিজ্ঞানী/প্রকৌশলী/অধ্যাপক প্রতিরক্ষা গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন এবং ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. কুদরত ই খুদা (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইনটিফিক এ্যাডভাইজার) ও ড. আবদুল মতিন চৌধুরী (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চীফ সাইনটিস্ট)। অন্যদিকে ভারতে ‘মিসাইল ম্যান’ খ্যাত সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালাম প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত গবেষণা কর্মসূচীকে সমন্বিত করা প্রয়োজন। প্রতিরক্ষা গবেষণার বিষয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ঐতিহ্যগতভাবে সমরাস্ত্র কারখানা ও সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অসামরিক প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ ও কারিগরগণই মূলধারার কাজে অবদান রেখে থাকেন।
সমরাস্ত্র কারখানাসহ দেশে যেসব প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটি/প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রয়োজন। এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব। অদ্যাবধি শুধু পাবলিক সেক্টরেই সমরাস্ত্র কারখানা/প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে বেসরকারী খাতেও ডিফেন্স প্রোডাক্ট তৈরির কথা ভাবা যেতে পারে। দেশীয় উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সামগ্রীকে প্রণোদনা দেয়া ও অগ্রগতিতে সহায়তা করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ক্রয়নীতিতেও পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বাংলাদেশী ও বিদেশী শিল্পের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে উঠতে পারে। এই সেক্টরে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের কথাও ভাবা যেতে পারে। প্রতিরক্ষা উৎপাদনে স্পিন অব ইফেক্ট আছে। যেমন বাংলাদেশ অস্ত্র গোলাবারুদ বিদেশে রফতানি করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানাকে অস্ত্র গোলাবারুদ রফতানির অনুমতি দেয়া যেতে পারে। প্রতিরক্ষা খাতে আরএন্ডডি’র জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য এ ধরনের নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা এখন সময়ের দাবি। যুদ্ধ নয়, শান্তির জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতির।
প্রতিরক্ষা শিল্প ও সামরিক গবেষণার ক্ষেত্রে এক ভবিষ্যত চিত্র কল্পনা করে... গড়ে উঠেছে নতুন নতুন সমরাস্ত্র কারখানা, সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান...। শত শত তরুণ সামরিক/অসামরিক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ গবেষণায় নিয়োজিত, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং..., টেকনোলজি ট্রান্সফার...। মিসাইল, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ ও স্টেট অব আর্ট মানের অস্ত্র সরঞ্জামাদি এখন নিজেদের কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে। মেড ইন বাংলাদেশ। রফতানিতে গার্মেন্টস, ওষুধের মতো অস্ত্র গোলাবারুদও নতুন বাংলাদেশী ব্রান্ড...। এখন এক নতুন সময়। জেগে উঠেছে আমাদের প্রিয় দেশ। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। এ নেশন অন মুভ। এমন সুবর্ণ সময়ে অন্যান্য সেক্টরের শিল্পের মতো ভবিষ্যতে আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পও অনেক দূরে এগিয়ে যাবে। কোন প্রতিবন্ধকতাই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
লেখক : সমরাস্ত্র কারখানার এনডিসি ডেপুটি কমান্ড্যান্ট