খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ শীতের শুরু থেকেই শীতকালীন সবজি চাষে মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কৃষকরা। শীত মৌসুমের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে প্রথম বছরেই বেশ লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। কম খরচে ভাল ফলন পাওয়ায় এবং বাজারে সবজির দাম ভাল থাকায় সবজি চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সবজি ক্ষেতের পাশাপাশি অনেক শৌখিন চাষীরা বাড়ির আঙ্গিনায় শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার গুঠিয়া, বামরাইল, জল্লা ও হারতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মাঠজুড়ে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, পালং ও লাল শাকসহ নানা জাতের সবজি। শীতকালীন রকমারি সবজি নিয়ে কৃষকরা দিনের সিংহভাগ সময় ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪০ হেক্টর জমিতে কিন্তু এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৯৯০ হেক্টর জমিতে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত উৎপাদিত সবজির লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণে অতিক্রম করবে। উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ডহরপাড়া গ্রামের সবজি চাষী মনির হোসেন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনি দেড় একর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, শালগম ও পালং শাক চাষ করেছেন।
কীটনাশক প্রয়োগ না করায় উৎপাদিত এসব সবজির চাহিদাও রয়েছে বেশ। একই গ্রামের সবজি চাষী ফিরোজ হাওলাদার জানান, শীতকালীন সবজি চাষে খরচ কম লাগে। এতে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। এবারই প্রথম তিনি ৫০ শতক জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করে ইতোমধ্যে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই আগামী বছর চাষের জমি আরও বৃদ্ধি করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বামরাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ মোড়াকাঠী গ্রামের শীতকালীন সবজি শিম চাষী নুরুল হক রাঢ়ী বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে তিনি শিম চাষ করছেন। এ বছরও তিনি ৬০ শতক জমিতে শিমের চাষ করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় মৌসুম শেষের আগেই তিনি ইতোমধ্যে প্রায় লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি করেছেন। আরও ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কালিহাতা গ্রামের টমেটো ও লাউ চাষী শেখ সালাম বলেন, এ বছরই তিনি প্রথম প্রায় দেড় একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। বাম্পার ফলন হওয়ায় মৌসুম শেষ না হতেই ইতোমধ্যে লাউ বিক্রি করে তিনি প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন। পাশাপাশি চাষী সালাম আরও ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। আশা করছেন তাতেও ভাল ফলন হবে। বামরাইল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জেম হোসেন তুহিন জানান, এবার বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করে চাষীরা লাভবান হয়েছেন।
শিকারপুর ইউনিয়নের মুন্ডপাশা গ্রামের নিরঞ্জন মাঝি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে তিনি ৫০ শতক জমিতে লাউ চাষ করছেন। শুধু লাউ নয় এর শাক বিক্রি করেও তিনি অনেক টাকা উপার্জন করেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় নয়টি ইউনিয়নে ব্যাপকহারে সবজি চাষ হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যে কারণে সবজির ফলন খুব ভাল হয়েছে। পাশাপাশি দামও ভাল পাওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবজি চাষ করে এবার অনেক চাষী স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার জানান, কম খরচে শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছেন। তাই এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সরাসরি জমি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যান।