ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অক্টোবরে রফতানি আয় এসেছে ২৭১ কোটি টাকা

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ নভেম্বর ২০১৬

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি  সাড়ে ৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রফতানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৯ কোটি ১৬ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয় ১ হাজার ১৩ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার। এ সময়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছে ২৭১ কোটি ২৮ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে মোট রফতানি আয় ছিল ২৬৩ কোটি ৮ লাখ ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৭৯ কোটি ১৬ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার। অথচ এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে দেখা যায় আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয় ১ হাজার ১৩ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) সময়ে রফতানি আয় ঘুরে দাঁড়ালেও সেপ্টেম্বরে এসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় কমেছে। তবে পরের মাস অক্টোবরে রফতানি আয় কিছুটা বেড়েছে। একক মাস হিসেবে অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছে ২৭১ কোটি ২৮ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে মোট রফতানি আয় ছিল ২৬৩ কোটি ৮ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় ২৫০ কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে মোট ৮৮২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় আসে ৯৫১ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছর হিসেবে প্রথম চার মাসে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। শুধু গত আগস্টেই তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের। সেপ্টেম্বরে ঈদ-উল-আযহার কারণে বেশ কিছুদিন ছুটি থাকায় রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে প্রাইম মুভার ধর্মঘটের ফলে কন্টেনার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রফতানি আয় কমে আসার অন্যতম কারণ বলছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ঈদ-উল-আযহার কারণে কারখানায় ৭ থেকে ১০ দিন বন্ধ ছিল। এর ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রাইম মুভার ধর্মঘটের ফলে কন্টেনার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। ওই মাসের রফতানি আয়ের পরবর্তী সময়ে দেখা যায়। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে আমাদের দেশে দুটো ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। ঈদের কারণে শ্রমিকদের বেশ লম্বা একটা সময়ের ছুটি ছিল। এছাড়া ঈদের জন্য কিছু অর্ডার জুনে হয়ে যায়। এই কারণে জুলাই এবং সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কিছুটা কমেছে। তবে অক্টোবরে এসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সারা বিশ্বেই বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্য দেশেও প্রবৃদ্ধি বেশি ইতিবাচক ধারায় নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিট), পাউন্ডের দর পতন সব মিলিয়ে বৈশ্বিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ভাল। রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল অবস্থানে আছে। তবে ‘নন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে’ আমাদের রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন তিনি। অন্য পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে চার মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। রফতানি আয় এসেছে ২৯ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এছাড়া চার মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) দেশে মোট রফতানি আয় হয় তিন হাজার ৪২৫ কোটি ডলার।
×