ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

৪৮টি এলডিসি দেশের নেতৃত্বে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে চার সুবিধা চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে চার সুবিধা চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে চার সুবিধা চাওয়া হবে। বিশ্বের ৪৮টি এলডিসি দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নেতৃত্বেই গঠন করা হয়েছে এলডিসি (স্বল্পোন্নত) গ্রুপ। তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দশম মিনিস্ট্রিয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার কোন্ বিষয়গুলো উত্থাপন করা হবে সে বিষয়ে নজর রাখছে অর্থনীতির শক্তিধর দেশগুলো। আজ মঙ্গলবার (১৫-১৮) ডিসেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য এবারের সম্মেলনে ১৬২টি দেশ অংশগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, ডব্লিউটিওর নিয়মানুযায়ী রফতানি বাণিজ্যে এলডিসি দেশগুলো সব সময় শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার কথা। এছাড়া আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ধনী দেশ এ সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি। তাই এবার বালি প্যাকেজের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ এলডিসি দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, রুলস অব অরিজিন, সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন ও কটন ইস্যুর চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিষয়ে ডব্লিউটিওর কাছে দাবি জানানো হবে। এছাড়া দোহা রাউন্ডের এজেন্ডাভুক্ত অবশিষ্ট ইস্যুসমূহ নিষ্পত্তি করার বিষয়েও ডব্লিউটিওর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে এবারের সম্মেলনে ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে কেনিয়া পৌঁছেছেন। জানা গেছে, এলডিসির মধ্যে বাংলাদেশের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ ডব্লিউটিওকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৫ সালে ১২২টি সদস্য নিয়ে সংস্থাটি যখন গঠিত হয়, তখন থেকে বাংলাদেশ সদস্য। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সীমিত সাধ্যের মধ্যেও চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, গত ২৫ বছর ধরে এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। মোট রফতানির ৬২-৭০ ভাগ হচ্ছে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী জনকণ্ঠকে বলেন, এই সম্মেলন বিশ্বের ৪৮টি এলডিসি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী। কারণ এলডিসি দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তাই ডব্লিউটিওর ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। তিনি বলেন, যে চারটি সুবিধা চাওয়া হচ্ছে তার মধ্যে তিনটিই বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। শুধু কটন ইস্যুটি আফ্রিকার কয়েকটি দেশের জন্য বেশি প্রযোজ্য। ৯৭ শতাংশ পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিলেও তাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নেই। তাই এবারের সম্মেলনে বাকি ৩ শতাংশ পণ্য রফতানিতেও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া হবে। এদিকে, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলছে, উন্নত বিশ্বের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করার সঙ্গে সেবা খাতেরও বাজার সুবিধা দিতে হবে। এটি পাওয়া গেলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত সব দেশ লাভবান হতে পারত। সেবা খাতের বাজার ধরতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কিছু খাত চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে পর্যটন, আর্থিক, প্রকৌশল, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। সংগঠনটির মতে, ডব্লিউটিওর আগামী সম্মেলনকে ঘিরে সরকার যে প্রতিনিধি দল গঠন করবে, তার অন্যতম কাজ হবে অন্য ৪৮টি এলডিসিকে সঙ্গে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করা, যাতে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে বালি ঘোষণা বাস্তবায়নে বাধ্য হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এলডিসি দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা জরুরী হয়ে পড়ছে। এটি নিশ্চিত হলে দেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানির সবচেয়ে বড় বাধা দূর হবে। জানা গেছে, এলডিসি দেশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে দ্রুত দেশের রফতানি বাজার আরও সম্প্রসারণ হবে। বাড়বে রফতানি। ভিশন-২১ বাস্তবায়নে উদ্যোক্তারা ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়নে রফতানি বাড়াতেই হবে। এছাড়া দেশের মোট রফতানির ৭৬ শতাংশই তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক রফতানির ৪০ শতাংশই আবার একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়ে থাকে, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। এলডিসি দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধায় পোশাক রফতানি হওয়ার কথা। ডব্লিউটিওর শর্তানুযায়ী শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া গেলে বাংলাদেশের রফতানি খাত আরও সমৃদ্ধশালী হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার দেবে। সব দেশ মেনে নিলেও তখন বাদসাধে যুক্তরাষ্ট্র। আর তখনই ৯৭ শতাংশ পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি এসেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) কিছু দেশে রফতানিতে বর্তমানেও আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পাই না। আবার ইইউতে যেটা পাই, সেটা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর সব এলডিসির এক ধরনের আস্থা রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে দেশের রফতানি আয়, রেমিট্যান্স এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাণিজ্যের অংশ। বাংলাদেশকে এসব দিক থেকে অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো যথেষ্টই সমীহ করে।
×