![১০ বিদেশী কোম্পানি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা ১০ বিদেশী কোম্পানি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/art-2-2412241903.jpg)
১০ বিদেশী কোম্পানি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা
বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড তৈরি পোশাক কেনে। তাদের মধ্যে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানই নেয় রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের প্রায় ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশী তৈরি পোশাক কেনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে সুইডেনের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় আছে যথাক্রমে স্পেনের ইন্ডিটেক্স ও আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক। বিদায়ী অর্থবছরে এই তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ক্রেতাদের তথ্য পর্যালোচনা করে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পোশাকের শীর্ষ ক্রেতার এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা তৈরিতে গত অর্থবছরে রপ্তানি হওয়া প্রায় ২১ লাখ চালান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব চালান থেকে ক্রেতার মূল কোম্পানির পাশাপাশি সহযোগী কোম্পানির আমদানির তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন শীর্ষ ১০ ক্রেতার ১ হাজার ২৬৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে বায়িং হাউস বা এজেন্টের মাধ্যমে নেওয়া পোশাকের হিসাব তালিকায় রাখা হয়নি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে কয়েক হাজার ক্রেতার কাছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে শীর্ষ ১০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ২৯ শতাংশই নিয়েছে এই ১০ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে মূলত বড় বাজারগুলোতে বিক্রি করছে। বাংলাদেশী পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের শীর্ষ ১০ ক্রেতার তালিকায় এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স ও প্রাইমার্কের পরে আছে ডেনমার্কের বেস্টসেলার, যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ, জাপানের ইউনিক্লো, পোল্যান্ডের এলপিপি, যুক্তরাজ্যের নেক্সট ও পোল্যান্ডের পেপকো। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা ওয়ালমার্ট গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ৪০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। প্রতিষ্ঠানটি বায়িং হাউসের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ পোশাক কিনে থাকে, যা শনাক্ত করা যায়নি। ওয়ালমার্ট কর্তৃপক্ষ কেনাকাটার তথ্য প্রকাশ করতে চায়নি। না হলে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ দশে জায়গা করে নিত।
বাংলাদেশ আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব প্রোডাকশন অফিসসহ উপস্থিতি আছে এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের। অলবিন নরডিন প্রেস অফিসার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট এইচঅ্যান্ডএম গ্লোবাল কমিউনিকেশন। বাংলাদেশের কারখানাগুলো মূলত সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশ থেকে গড়পড়তা সস্তা পোশাক কিনছে।
তারা প্রতি পিস পোশাক কিনেছে গড়ে তিন ডলারে। শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে ইউনিক্লো সবচেয়ে বেশি প্রতি পিস পোশাক ৫ দশমিক ৪১ ডলারে কিনেছে। ফ্রান্সের লুই ভিতোঁ, ডিওর ও শ্যানেল, ইতালির গুচি, যুক্তরাষ্ট্রের নাইকির মতো বিশ্বের অভিজাত ব্র্যান্ডগুলো গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পোশাক কিনেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জার্মানির স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। গত অর্থবছরে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পোশাক কিনেছে অ্যাডিডাস। প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ছিল সাড়ে ২৩ ডলার বা ২ হাজার ৮৩৪ টাকা।
আবার পরিমাণে কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রালফ লরেন, কানাডার লুলুলেমনের মতো বিখ্যাত ক্রেতারাও বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। বাংলাদেশ থেকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো অল্প কিছু পোশাক কিনছে, যেগুলো প্রতি পিসের রপ্তানি মূল্য ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার। বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম। গত অর্থবছরে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সহস্রাধিক আউটলেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক তুলেছে এই কোম্পানি। যদিও অনলাইনে তাদের পোশাক কিনতে পারে ৬০টি দেশের মানুষ।
বাংলাদেশে তৈরি এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে এইচঅ্যান্ডএম। বাংলাদেশের দুই শতাধিক কারখানা থেকে এই পোশাক কিনেছে তারা। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতিদিনের চালানে থাকছে এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক।