ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন

পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ বেড়েছে

আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির অর্ডার বেড়েছে

আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির অর্ডার বেড়েছে। যুদ্ধ আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে আবার এ শিল্প খাতের ব্যবসা ফিরছে। পাশাপাশি চীন থেকেও ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ভালো ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। এমনকি তারপরের শরৎ ও শীত মৌসুমের ক্রয়াদেশ নিয়ে আশাবাদী পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, ক্রয়াদেশ নিয়ে এখন কোনো সমস্যা নেই। ফলে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হলে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই কারখানার ক্রয়াদেশ দেশের মধ্যে অন্য কারখানাগুলো পেয়েছে। তা ছাড়া চীন থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশের একটি অংশ পাচ্ছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো। তবে বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ও কারখানার নিরাপত্তা বড়  দুশ্চিন্তার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের গতিপ্রকৃতি বোঝার অন্যতম বড় নিয়ামক কাঁচামালের আমদানি প্রাপ্যতা বা ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি)। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির সদস্য কারখানাগুলোর পক্ষে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রাপ্যতা (ইউডি) নেওয়া ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলারের ইউডি নেওয়া হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু করা হয়।

তার মধ্যে গত দুই মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) ৪৯৭ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু হয়েছে। ধামরাইয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ বলেন, প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। আশা করছি, আগামী মৌসুমগুলোতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকরা গত সেপ্টেম্বরজুড়ে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করে।

পরে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে ১৮ দফার বিষয়ে সমঝোতা হওয়ায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অক্টোবর থেকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার আবারও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। নভেম্বরে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা। তারা একটি কারখানায় আগুনও দিয়েছেন। চলতি মাসে ১৫ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে। এতে সেখানকার বেশ কিছু কারখানায় দিনের পর দিন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা পরিপূর্ণ হওয়ায় অনেক ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বর্তমানে বড় সমস্যা তৈরি পোশাকের দাম। দু-একটি ব্র্যান্ড ছাড়া সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে কম দাম অফার করছে। একদিকে উৎপাদনের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে দাম কমছে। ফলে সংখ্যায় ক্রয়াদেশ বাড়লে রপ্তানি আয় সেই হারে বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, একের পর এক আন্দোলনে বিদেশী ক্রেতারা উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলেছেন ট্রাম্প। সেটি হলে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হবে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বাড়তি ক্রয়াদেশ পেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরানো শুরু করেছে বলে জানালেন স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কারখানায় পূর্ণসক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের আমাদের শিল্পের বেশ কিছু বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব কারখানার ক্রয়াদেশও আমাদের কারখানায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

×