ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের আশ্বাস

সব পোশাক কারখানা আজ থেকে খোলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সব পোশাক কারখানা আজ থেকে খোলা

দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার চলমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকখাত মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল থেকে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করলে নিরাপত্তার স্বার্থে শতাধিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে এদিন দুপুরে সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন উপদেষ্টা। পরে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হলে বিকেলে কারখানা খোলা রাখার কথা জানায় বিজিএমইএ। বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা ছাড়াও এনএসআই, শিল্প পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবারও ১০০টির বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। কিছু জায়গায় হামলা হয়েছে। যেসব কারখানা বুধবার বন্ধ ছিল আজ বৃহস্পতিবার থেকে তা চালু হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিজিএমইএকে পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত করায় দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে বলেও জানান খন্দকার রফিকুল ইসলাম।

পোশাক কারখানায় যারা ঝামেলা করছেন তারা বহিরাগত জানিয়ে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যা খুবই কম। বহিরাগত কারা হামলা চালাচ্ছে তাদের চেনে না বিজিএমইএ। এদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। মাসের শুরুতে কারখানায় ঝামেলা হলেও বেতন দিতে দেরি হবে না।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহহিল রাকিব বলেন, প্রতিদিন কারখানায় শ্রমিক ঢুকছে। কিন্তু বহিরাগতরা এসে ঝামেলা করছে। পুলিশ নিজেই আছে অস্থিরতার মধ্যে। আজকের ওসি জানে না কালকে কোথায় বদলি হবে। আর্মির হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই। আবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা থাকলেও তারা বর্তমানে দুর্বল। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রাত থেকে যৌথ অভিযান শুরু হবে।

এতদিন সমন্বয়ের অভাব থাকলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এসব বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর আগে বুধবার চাকরি এবং নিয়োগে নারী-পুরুষের সমান অধিকারসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। এদিন দুপুরে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুর, সাভার এবং আশুলিয়ায় শতাধিক পোশাক কারাখানায় ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।
এদিকে, মজুরি, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েকদিন ধরেই পোশাক শিল্পে চলছে চরম অসন্তোষ। শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ইতোমধ্যে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় শতাধিক পোশাক কারাখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। পোশাক শিল্পের এই অচলাবস্থা নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রমুখ। এদিকে, শিল্প পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জনকণ্ঠের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বুধবার সকালে নির্ধারিত সময়ে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় কাজে যোগ দেন।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকেরা চালু থাকা বিভিন্ন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশীরাও যোগ দেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকেরা কারখানায় আসেন। পরে বিভিন্ন কারখানার সামনে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হা-মীম গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের দেখে তারা কেন কারখানায় কাজ করছেন, এমনটি বলার পর কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

×