ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে

রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে

এখন পর্যন্ত রেমিটেন্সে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে। তবে আটটি ব্যাংক প্রবাসীদের রেমিটেন্সের এক টাকাও দেশে আনতে নিজেদের চ্যানেলকে ব্যবহার করতে পারেনি।
শূন্য রেমিটেন্স আদায়কারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। আর বেসরকারি তিন ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সিটিজেন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। চারটি বিদেশী ব্যাংক হলো- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংক।
এদের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের রেমিটেন্স প্রবাহ ভালো থাকলেও রাকাব’র বিষয়ে জানা যায়, রেমিটেন্স আহরণে তারা চুক্তিবদ্ধ নন। আর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও অবগত রয়েছে। ঈদুল ফিতরের সময় বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে। উৎসবের পরেও রেমিটেন্স আহরণের এই গতি অব্যাহত রয়েছে। শুধু এপ্রিল মাসের প্রথম ২১ দিনেই প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রায় ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার। যার গড় দৈনিক রেমিটেন্স এসেছে ৯ কোটি ডলার (প্রায় ১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা)।

কিন্তু এই আটটি ব্যাংকের কোনোটিই এ সময়ে দেশে আসা রেমিটেন্সের কোনো অংশ পায়নি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য পাওয়া যায়।  গত ঈদুল ফিতরের আগে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে প্রবাসীরা ৩২৯ কোটি ডলার পাঠান, যা একক মাস হিসাবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এর ফলে রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটাই ছিল প্রথম ঈদ, যার ধারাবাহিকতা এখন অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা এখন তাদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকেই বেছে নিচ্ছেন। 
মার্চ মাসের প্রথম ২৪ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছিল ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার। পুরো মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৯ কোটি ডলার। গত বছরের মার্চে এসেছিল ১৯৯ কোটি ডলার। আগের বছরের মার্চের তুলনায় এবার একই মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৬৪ শতাংশ। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তাও কিছুটা কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে। এদিকে খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৪ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে। দেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টানা ৭ মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

ফেব্রুয়ারিতে তারা পাঠান ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগে জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-মার্চে প্রবাসীরা দেশে ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। 
আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার। প্রবাসী আয় হলো দেশে মার্কিন ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশী মুদ্রা খরচ করতে হয় না বা কোনো দায় পরিশোধ করার দরকার পড়ে না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশী মুদ্রা খরচ করতে হয়। আবার বিদেশী ঋণ পরিশোধেও ডলারের প্রয়োজন হয়। সার্বিকভাবে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ বা মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

×