ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার নেওয়া বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১০ মার্চ ২০২৫

ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার নেওয়া বেড়েছে

চলতি অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার নেওয়া বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধারের ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়া এবং সঙ্কোচনশীল মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঋণ কমানোর পরিকল্পনার কারণে চলতি অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার নেওয়া ৭৪ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে ৭৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা ধার নিয়েছে সরকার, যা এক বছর আগের একই সময়ে ৪৫ হাজার ২৩১ কোটি টাকা ছিল। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারের বকেয়া ঋণ ৩.৯৭ লাখ কোটি টাকা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধারের ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের বকেয়া ধারের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এ ধারের পরিমাণ ২০২৪ সালের জুনের ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা থেকে কমে ৯৪ হাজার ৪২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েেেছ। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার বর্তমানে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করার প্রক্রিয়ায় গেছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালান্স শিটকে সঙ্কুচিত করা হচ্ছে, যা আগের অস্বাভাবিক সম্প্রসারণকে সংশোধন করছে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এই প্রবণতা রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধিকে কমিয়ে দিচ্ছে। গত দুইমাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমছে, তবে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ধার সরাসরি কমানো এখনো দেখা যায়নি। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার না বাড়ালে মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার ধার না বাড়ালে বাজারে অর্থ সরবরাহ অনেক বেশি থাকত। ব্যাংকগুলোর হাতে অনেক তারল্য থেকে যাওয়ার কারণে তারা বেসরকারি খাতকে বেশি ঋণ দিত এবং এসব ঋণের ঠিকমতো ব্যবহার না হলে মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ তৈরি হতো। অবশ্য এখন বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণে ব্রড মানির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু দুর্বল ব্যাংকের আমানত ঘুরেফিরে কয়েকটি সবল ব্যাংকের হাতে চলে এসেছে। ফলে সবমিলিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে এখন তারল্যের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি। ওই কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় ব্যাংকগুলোর জন্য বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় টুল হয়ে উঠেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড। সরকারের নিশ্চয়তা থাকায় এই বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই, ফলে ব্যাংকগুলো সেদিকে ঝুঁকছে। অনেকসময়ই সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ ট্রেজারি বিল ও বন্ড নিলামে তোলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো বিড করছে তার কয়েকগুণ বেশি। ফলে ১২ শতাংশ পার করে যাওয়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ৩৮ বেসিস পয়েট কম। নভেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ বছরের সর্বনিম্ন ৭.৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ। এরপর থেকেই এ প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমছে। এই প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ৯.৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নিট ধার বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে সরকারের নিট ধার বেড়েছিল ১২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিট ধার বাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, পুরো অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ৯৯ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে এবং ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং-বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় আট মাসে ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ধার নিয়েছে সরকার।

×