দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (চেয়ারম্যান) মমিনুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে অর্থনীতির যে মৌলিক সূচকগুলো আছে, সেখানে যে ধরনের একটা স্পেস দেখতে পারছি, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে সুদের হার যে পরিমাণে উচ্চ, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক একটা অনিশ্চয়তার যে বিষয় আছে, আমাদের এই মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতের যে সমস্যাগুলো ভীষণভাবে অর্থনীতিকে বিচ্যুত করছে, সেই পরিস্থিতিতে আমি বলব না যে আমাদের শেয়ারবাজারের অবস্থান খুব খারাপ অবস্থায় আছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান, হাবিবুর রহমান, ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী ও মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ারবাজারে চলা দরপতনের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী ৫০ শতাংশের ওপরে লোকসানে রয়েছেন। শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতিকে আপনারা স্বাভাবিক মনে করেন কি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তার উত্তরে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, রেগুলেটর বা অপারেটর বলবে না বাজার স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক। এটা বলবে বিনিয়োগকারীরা, স্টেকহোল্ডাররা।
তিনি বলেন, গুজবে কান দিয়ে যারা দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিপরীতে যারা মৌলিক উপাদান দেখে বিনিয়োগ করেছেন তাদের ক্ষতি হয়নি বরং লাভ হয়েছে এমন মন্তব্য করে মমিনুল ইসলাম বলেছেন, এই মুহূর্তে উচ্চ সুদের হার রয়েছে। ব্যাংকিং কাতের সমস্যার কারণে অর্থনীতি বিচ্যুত হচ্ছে। রাজনৈতিক একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার খুব খারাপ অবস্থায় নেই।
মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ধারাবাহিক পতনকে অ্যারেস্ট করতে পেরেছি। যেখানে আমাদের সবারই পতন শঙ্কা ছিল, বাজারে সবাই যখন আতঙ্কিত হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত আমাদের যারা মার্কেট প্লেয়ার ছিল, তাদের একটা বড় অংশ বা কিছু অংশ তারা বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, যখন তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে এই মার্কেটে পতন ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যেখানে আছি, আমাদের প্রত্যাশা এখান থেকে আরও ভালো হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেটা আছে, সেটাকে আপনি বলতে পারেন না অস্বাভাবিক কিছু।
‘তারপরও এই জায়গায় দ্বিমত থাকবে, আমার কাছে মনে হবে স্বাভাবিক, আর একজনের কাছে মনে হবে খুবই ভালো, আর একজনের কাছে মনে হতে পারে খুবই খারাপ। কিন্তু যদি আমি গুজবে কান দিয়ে দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকি, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হয়েছে। আর যারা মৌলিক উপাদান দেখে বিনিয়োগ করেছেন, আমার ধারণা তাদের ক্ষতি হয়নি বরং লাভ হয়েছে’ বলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার ভিশনভাবে সংকুচিত। পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ১০ বছরে সড় ৬০০ কোটি টাকার আইপিও হয়েছে। এর বেশিরভাগ দুর্বল। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার অযোগ্য প্রতিষ্ঠান আইপিওতে এসেছে।
তিনি বলেন, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ গত তিন মাস সম্পূর্ণ প্রভাব মুক্ত থেকে কাজ করেছে। ডিএসইর শীর্ষ পদ এমডি, সিটিও এবং সিওও পদ খালি রয়েছে। এই তিন পদে আমরা যোগ্য ও দক্ষ লোকবল নিয়োগের জন্য কাজ করছি। আইপিও সিস্টেম কিভাবে সহজীকরন ও ডিজিটালাইজ করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ডিএসইর রিসার্স সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ আমরা করব।
তিনি আরও বলেন, ফ্লোর প্রাইসের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত দুই বছর ধরে ছিল। যা বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাজারের ওপর থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।
বর্তমান কমিশনের যোগ্যতা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় কোনো কিছু এগিয়ে নিতে নেতা দরকার হয় বলে জানিয়েছি। যার সততা ও যোগ্যতার গুণাবলি থাকবে। বর্তমান কমিশনকে আমরা এখন পর্যন্ত সৎ বলে মনে করি।
সিএসইর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রভাব মুক্ত থেকে কাজ করছি। বিএসইসির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচা হয়েছে। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই।
ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিগত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে কি কি অনিয়ম হয়েছে, জাল-জালিয়াতি হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কি কি অনিয়ম হয়েছে, তা চিহ্নিত করা না গেলে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা যাবে না।