বাংলাদেশ ব্যাংক
মূল্যস্ফীতি কমাতে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো সরকারই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। যদিও এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। জুলাই থেকে অক্টোবর-চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৬ হাজার ২৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৯ হাজার ৮৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পাঁচ মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের বছরের এই সময়ে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে এ টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে মূল্যস্ফীতি বা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পতিত সরকারের আমলে গত কয়েক বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে হু হু করে। এতে মানুষে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। বরং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে।
অন্যদিকে ঋণের সুদ হার বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ভোক্তা ঋণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে যায়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ দিলে বাজারে সার্কুলেশন বেড়ে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। কিন্তু সরকারের এখন প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সেজন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এটা দোষের নয়। এখন যেটা হচ্ছে, লেনদেনের মাধ্যমে একজনের পকেট থেকে আরেকজনের পকেটে টাকা যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা নতুন সরকারের এখন লক্ষ্য হলো মানুষের জীবন সহজ করা। টাকা না ছাপিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে।
এ যাবত ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২১৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এম হাসান