দুর্বল ব্যাংকগুলো গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা দিতে পারছে না
আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যেসব ব্যাংক ছিল, সেই সব ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। গ্রাহকরা মুনাফার টাকা তুলতে পারছেন না, আসল টাকাও ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো পথ বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো। ফলে টাকা না পেয়ে গ্রাহকেরা ব্যাংকগুলোতে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
জানা গেছে, মুনাফার টাকা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ব্যাংকে জমা হলেও যারা তা তুলতে পারছেন না এবং নিকট ভবিষ্যতে যাদের সঞ্চয়পত্র নগদায়ন (ম্যাচিউরড) হবে, তাদের অনেকেই জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে ব্যাংকের শাখা ও হিসাব পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। গত দুই মাসে সঞ্চয় অধিদপ্তরে এমন ২৭০টি আবেদন জমা পড়েছে। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এ আবেদনের সংখ্যা অস্বাভাবিক। সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবেরাও আছেন বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ শরিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের শাখা পরিবর্তনের আবেদন বাড়ছে। আবেদনকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক পরিবর্তনের পদক্ষেপ অধিদপ্তর থেকে নেওয়া হচ্ছে। এতে আইনি কোনো বাধা নেই। এদিকে সঞ্চয়পত্রের টাকা তোলার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর চিঠি পাঠিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি)। একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে। বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে অথবা মালিকানায় ৯টি বেসরকারি ব্যাংক ছিল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নামে বেনামে বের করে নেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে এখন চরম তারল্য সংকট বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আমানতকারীদের অনেকে তাদের গচ্ছিত অর্থ চাহিদামতো তুলতে পারছেন না। শীর্ষ পর্যায় ছাড়া ব্যাংকের কর্মকর্তারা বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। সাবেক সরকারের আমলে বিশেষ তারল্য সমর্থন দিয়ে এসব ব্যাংকে লেনদেন স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও এস আলমের মালিকানায় ছিল।
পরিবর্তিত সময়ে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যাংকার নুরুল আমিন। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে মুনাফা না পাওয়ার সঙ্গে ব্যাংকের তারল্য সংকটের সম্পর্কের কথা তিনি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটছে। এগুলো হচ্ছে, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র।