ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

আতঙ্ক কেটে গেছে ॥ ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ২৬ জুলাই ২০২৪

আতঙ্ক কেটে গেছে ॥ ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের আতঙ্কে বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। মূলত শেয়ার বিক্রির চাপের কারণে দিনটিতে মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেড় বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়। তবে বৃহস্পতিবার আতঙ্ক কেটে শেয়ারবাজারে ফের ফিরেছেন ক্রেতা। ফলে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

কারিগরি ত্রুটি কমলেও বৃহস্পতিবারও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে ইন্টারনেটেও ধীরগতি ছিল। অবশ্য সব ব্রোকারেজ হাউস নির্ধারিত সময়ে লগইন করে লেনদেনে অংশ নিতে পেরেছেন এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে লেনদেনে সমস্যা হয়নি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বুধবার ব্রডব্যান্ড নেট এলেও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। ফলে বুধবারের পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায় না। ইন্টারনেটের গতি কম থাকলেও বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সে আতঙ্ক কেটে গেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের শেয়ারবাজারে।
গত রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস। সীমিত পরিসরে চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক খোলায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু করা হয়। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
বুধবার নির্ধারিত সময় বেলা ১১টায় শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় ইন্টারনেটে সমস্যা হওয়ায় লেনদেনে তার প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে অকেজো হয়ে পড়ে মোবাইল অ্যাপ। পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে চলা তা-বের আতঙ্কও ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে ডিএসইতে লেনদেন কমে দুইশ’ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। একই সঙ্গে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দর কমে যায়। ফলে সূচকের বড় পতন হয়।
তবে বৃহস্পতিবার সে আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। মোবাইল অ্যাপ কাজ না করলেও বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন। এতে বেড়েছে ক্রেতা। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার।  ফলে বেশিরভাগ কোম্পানির দর বেড়ে যায়। ক্রেতার চাপ বেশি থাকায় মূল্যসূচকেরও বড় উত্থান ঘটে।
শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে আবারও পতনের আতঙ্ক পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। অবশ্য সে আতঙ্ক কাটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বাজারে ক্রেতার চাপ বাড়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হয়।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ে ২৮৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। এর বিপরীতে দাম কমেছে ৬৬ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগেরদিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগেরদিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩২ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৩৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার লেনদেন হলেও ইন্টারনেটের সমস্যা ছিল। গতকালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। তাছাড়া কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার একটা প্রভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পড়ে। যে কারণে বড় দরপতন ও লেনদেন কম হয়। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আতঙ্ক, উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারেননি। আবার ইন্টারনেটের গতিও কিছুটা কম ছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ভালো ছিল। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৯টির। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৯টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

×