![এক বছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১৩ বিলিয়ন ডলার এক বছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১৩ বিলিয়ন ডলার](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/art-1-2407031538.jpg)
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
আমদানির দায় পরিশোধে সহায়তা দিতে গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রির পরিমাণ ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এ নিয়ে গত তিন অর্থবছরে বাংলাদেশ বিক্রি করেছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি। গ্রস রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। তিন বছর আগে যা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল। আর নিট রিজার্ভ ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিছু বৈদেশিক ঋণের অর্থ যোগ হওয়ায় গত কয়েক দিনে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমদানি কমানো, অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে বিদেশী ঋণ ও বিনিয়োগ কমা এবং আগের ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের ওপর যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে ডলার সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। ব্যাংকগুলোর সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। বেশির ভাগ ডলার দেওয়া হয়েছে সরকারি খাতের জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির দায় মেটাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছিল ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ডলার। ২০২১ সালের আগস্টের আগ পর্যন্ত ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি ছিল। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করে, তার চেয়ে বাজার থেকে কিনতে হয়েছে বেশি। ফলে ওই সময় রিজার্ভ দ্রুত বাড়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনেছিল ৭৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার মধ্যে মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় হুন্ডি কমে রেমিটেন্স অনেক বেড়েছিল। ওই সময়ে বৈশ্বিক চাহিদা কম থাকায় সুদহার তলানিতে নামে। তখন বাংলাদেশ বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ আরও বাড়ানোর নীতি নেয়। এতে করে রিজার্ভ দ্রুত বাড়ে।
এখন সেই দায় পরিশোধে চাপে পড়েছে দেশ। আবার ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের ৮৪ থেকে ৮৫ টাকার ডলার এখন ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একদিকে সুদহার বৃদ্ধি, আরেকদিকে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে।
চলমান সংকটের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার ঋণ। গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আবার আইডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া গেছে আরও ৯০ কোটি ডলার।
গত জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। গত ৪৭ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ২৩০ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে রিজার্ভের সামান্য উন্নতি হয়েছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এখন তিনটি হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে গত বছরের জুলাই থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করতে হচ্ছে। সে অনুযায়ী জুন শেষে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আর নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
আগের পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এর মানে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে আরও ৪ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী কমেছে ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার।