ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। তিনি বলেন, চলতি বছরের বাকি সময়ের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান। আশা করি, আগামী তিন মাসের মধ্যে একটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচালিত প্রথম ব্যাংক বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। অ্যাসেট রিকভারি, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং রেমিটেন্স বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, এই কঠিন সময়েও আমাদের ব্যাংক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত গার্মেন্টস শিল্প ও কারখানাগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষত এলসি সুবিধা প্রদানসহ গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করায় ন্যাশনাল ব্যাংক সদা সচেষ্ট। পাশাপাশি দেশর অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক যথেষ্ট সচেষ্ট। ফলে সাম্প্রতিক সময়েও রেমিটেন্সে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থান দৃঢ় রয়েছে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের অনিয়ম ছিল বহুমাত্রিক ও বহুপাক্ষিক। নিয়ম বা অনিয়ম যেভাবেই ঋণ দেওয়া হোক, অনাদায়ী ঋণ আদায় আমাদের লক্ষ্য। তবে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোনো অনিয়ম হয়নি, আগামীতেও হবে না। অনিয়মের টাকা উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। ৫টি টিম কাজ করছে, দেশের বাইরে থেকেও অডিট কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যাংকের ওপর আস্থা না থাকায় গ্রাহক অন্য ব্যাংক চলে যাচ্ছে, এটা আমাদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। আস্থা রাখুন, তিন মাস পর ভালো কিছু দেখা যাবে। গ্রাহকদের কোনো কোনো ব্যাংকের প্রতি আস্থা নেই। কারণ মানুষের বেতন যা বেড়েছে তার চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এতে অনেক গ্রাহক সঞ্চয় ভাঙছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় আমরা সেই আস্থা ফেরানোর কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের বড় ধরনের আয় আসতো বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। অনিয়মের কারণে এই আয়ে ভাটা পড়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এটিও ইতিবাচক ধরার ফিরবে।
উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের টাকা যারা লুট করেছে আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। যেসব ব্যক্তি এই ব্যাংক লুট করেছে তাদের অনেকের গুলশানের জায়গা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছি। আমরা রিকভারিতে জোর দিয়েছি। যদি তারা অর্থ ফেরত না দেয় তাহলে তাদের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ ফিরিয়ে আনব। এ ছাড়া যেসব অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে সংকট কাটবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়। এর মাধ্যমে এস আলমের হাত থেকে দখলমুক্ত করা হয় ন্যাশনাল ব্যাংককে।
বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক আবদুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালক জাকারিয়া তাহের, স্বতন্ত্র পরিচালক মুখলেসুর রহমান, মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, ড. মেলিতা মেহজাবিন, মো. জুলকার নায়েন উপস্থিত ছিলেন।