ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

অর্থনীতি বিভাগের সব খবর

চা শিল্প ॥ তাপ প্রবাহে ক্ষতির শঙ্কা

চা শিল্প ॥ তাপ প্রবাহে ক্ষতির শঙ্কা

তীব্র তাপ প্রবাহের কবলে পড়েছে চা শিল্পাঞ্চল। তাপ প্রবাহে পুড়ছে চা গাছ, বাড়ছে রোগব্যাধি এমনি এক অবস্থা বিরাজ করছে চা শিল্পাঞ্চল খ্যাত সিলেট ও চট্টগ্রামের চা বাগানগুলোতে। ফলে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করেছেন চা উৎপাদকরা। চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সময়মতো বৃষ্টি না হলে ৭৫-৮০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত অনাবৃষ্টির সঙ্গে তীব্র দাবদাহে এমন অবস্থা। চা বাগানের জন্য যেমন ভারী বর্ষণ দরকার, তা এখনো হয়নি। সেচের পানি বেশি দিতে হচ্ছে বাগানগুলোতে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছেন তারা। জানা যায়, দেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ক্ষুদ্রায়তনের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং পঞ্চগড় জেলা মিলে ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে ১৬৯টি বাগানে চা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কেবল মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা ৯০ এবং চা চাষের ভূমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ১৬০ হেক্টর, যা জেলার মোট আয়তনের ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালে ১৮৪ বছরের চা শিল্পে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেও সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালে ১৬৮টি চা-বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা-চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে শ্রমিক অসন্তোষ, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিরূপ আবহাওয়া ও কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়াসহ নানা কারণে চায়ের উৎপাদন কমেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানের চারা গাছ মরে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানা রোগবালাই। তাপে ঝলসে যাচ্ছে গাছের কচি পাতা। বিশাল সবুজের সমারোহ এখন কালচে লাল। চা পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে নতুন পাতা আর কুঁড়ি না আসায় চা শ্রমিকরাও নির্ধারিত পরিমাণ চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন না। এতে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন মৌসুমের শুরুতেই চা শিল্প প্রতিকূলতার মুখে পড়ায় কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে বিকল্প ইরিগেশন দিয়ে চা গাছকে প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টা করছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। আলাপকালে চা শ্রমিকরা জানান, দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে বৃষ্টির পরিবর্তে কৃত্রিম পানি সরবরাহের যে উৎসগুলো ব্যবহার হয় সেই লেক, পাহাড়ি ছড়াগুলোতেও নেমে গেছে পানির স্তর। তাপমাত্রার কারণে পোকামাকড় বেড়েছে। নতুন পাতা না আসায় অনেক কষ্ট করে বাগানে ঘুরে ঘুরে চা পাতা উত্তোলন করছেন তারা। ফলে মৌসুমের শুরুতে অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে চা বাগানে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের ভুড়ভুড়িয়া চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক সারথী দেশওয়ারার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, বৃষ্টি না থাকার কারণে এই সময়ে সারা দিনে মাত্র ১০-২০ কেজি পর্যন্ত চা পাতা তুলতে পারছি। অথচ বৃষ্টি থাকলে আমরা এ সময়ে সারা দিনে ৩০-৪০ কেজি পাতা তুলতে পেরেছি। এতে তাদের দৈনিক ১৭০ টাকা হাজিরার (বেতন) জন্য যে ২৪ কেজি পাতা বাধ্যতামূলক তুলতে হয় তাও পূরণ হচ্ছে না। চা শ্রমিক নেতা দীপংকর ঘোষ বলেছেন, খরায় বেশি পাতা তোলা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা আগে যে পরিমাণ পাতা তুলতেন, এখন তার অর্ধেক পাতা তুলেছেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় চা উৎপাদনে দুর্দিন চলছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সময়মতো বৃষ্টি না হলে ৭৫-৮০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত অনাবৃষ্টির সঙ্গে তীব্র দাবদাহে এমন অবস্থা। চা বাগানের জন্য যেমন ভারী বর্ষণ দরকার, তা এখনো হয়নি। সেচের পানি বেশি দিতে হচ্ছে বাগানগুলোতে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছেন তারা। বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেছেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন কোনো উৎপাদন নেই বললেই চলে। তবে দু-একটি বাগানে পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের হালদা ভ্যালি চা-বাগানের মালিক শিল্পপতি নাদের খান বলেছেন, বাগান জ্বলে যাচ্ছে। চা-শিল্পকে রক্ষায় শতভাগ ইরিগ্রেশনের বিকল্প নেই। এটি শতভাগ করতে পারলে উৎপাদন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। অন্যথায় চা-বাগান রক্ষা করা যাবে না। যদিও শতভাগ ইরিগ্রেশন অনেক ব্যয়বহুল। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেছেন, এই সময়ে চা অঞ্চলে ১৫-২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছর মার্চে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ চলতি বছর মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ মাসে এই অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। জেলার সব চা বাগান খরার কবলে পড়েছে।   বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, চায়ের জন্য ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরায় পড়বে চা। চা পাতায় দেখা দিবে বাঞ্জি দশা। তবে চা বাগানে প্রতি ২০ ফিট অন্তর অন্তর সেড টি থাকলে তা ৩৫-৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, জেলার কিছু বাগানে চলতি মৌসুমে চা পাতা উত্তোলন শুরু হলেও টানা দাবদাহে প্রচণ্ড প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন চা বাগানে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে চায়ের কুঁড়ি বের হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনে চা বাগানে সমন্বিত পদ্ধতি মেনে চলা, চা গাছের গোড়ায় কচুরিপানা-লতাপাতা দেওয়া, প্রতিটি বাগানেই জলাধার তৈরি করা এবং সেচ পদ্ধতি চালু রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

আমদানি বাড়িয়ে শুল্কের সমাধান

আমদানি বাড়িয়ে শুল্কের সমাধান

বিশ্বের শতাধিক দেশের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ যদিও আপাতত তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক বসেছে ৩৭ শতাংশ এ শুল্ক সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর। দেশের খাদ্যশস্য আমদানিকারক ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলায় একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্যশস্য আমদানি বাড়ানো। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, ভুট্টা, সয়াবিন, মসুর, মটর ডাল, বার্লি, তেলজাতীয় ফল, শস্যবীজ এবং ফল আমদানি কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, অথচ আমদানি হচ্ছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ তিন গুণের বেশি। সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলে সামান্য কিছু ভর্তুকি বা কোনো নীতি সহায়তার মাধ্যমে খরচ কমানোর চেষ্টা করতে পারে। তখন বড় আমদানি হলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমবে। আমদানিকারকরা বলেছেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করছে। গত বছর (২০২৪ সাল) প্রায় ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। সয়াবিন আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। এছাড়া বছরে প্রায় ৫ লাখ টন ভুট্টা, ৫ লাখ টন ডাল, ১ থেকে দেড় লাখ টন বার্লিসহ আরও প্রায় ৫ লাখ টন অন্য খাদ্যশস্য আমদানি হচ্ছে বিশ্ববাজার থেকে। এমন বড় আমদানির তথ্য দিচ্ছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এ সংস্থার হিসাবে বিশ্ববাজার থেকে প্রায় সোয়া কোটি টন খাদ্যপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এ খাদ্য আমদানি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে গম, ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধ। বাংলাদেশ বিশ্বের খাদ্যশস্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। আর যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে প্রথম। এ অবস্থায় সরকার চাইলে খাদ্যশস্যের সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের বেসরকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন গম আমদানি করছে কানাডা, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র পাশাপাশি, দুই দেশের গমের মানও কাছাকাছি। শুধু পরিবহন খরচ, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর কিছুটা ভেতরে হওয়ায় আমরা কানাডা থেকে গম নিচ্ছি। এর পরিমাণ প্রায় বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ টন। সরকার যদি নীতিগত সুবিধা দেয় আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ সম্ভব। সেজন্য ব্যবসায়ীদের পণ্যের খরচ সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে দুই দেশেরই। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের প্রিমিয়াম বেশি। জাহাজ ভাড়া বেশি হয়। সেগুলো কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু গম নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর সয়াবিন তেল, তেলবীজ, মসুর ডাল, মটর ডাল, বার্লিও আমদানি করা যেতে পারে। বড় পরিসরে আমদানির জন্য শুধু নীতি সহায়তা ও দুই দেশের সরকারের সদিচ্ছা দরকার। অর্থনীতি ডেস্ক

কিভাবে পাবেন ভোক্তাঋণ

কিভাবে পাবেন ভোক্তাঋণ

জীবনে নানা ধরনের জরুরি প্রয়োজনে ভোক্তাঋণ নেওয়া হয়। অসুখ-বিসুখের খরচ মেটানোর জন্য, সংসারের ফ্রিজ-টিভি এবং এসিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য, আবার অনেকে ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনার জন্যও ঋণ নেন। সন্তানদের পড়াশোনার বাড়তি খরচ জোগাতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন অভিভাবকরা। দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরির জন্যও ঋণ নেন ভ্রমনপিপাসুরা। অল্প টাকার প্রয়োজন হলেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা সাধারণত পারসোনাল লোন বা ভোক্তাঋণ নেন। এই ঋণ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয় বেশি। আয়ের সামর্থ্য অনুসারে গ্রাহককে এসব ঋণ দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণত অল্প টাকা বেতনের চাকরিজীবীরা ব্যক্তিগত ঋণ বেশি নেন। এই ঋণের সুবিধা হলো, আপনি যে কোনো কাজে ওই টাকা খরচ করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে সাধারণত জামানত দিতে হয় না। ঋণ নেওয়ার আগে যা ভাবা প্রয়োজন: ঋণ নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, দ্রুত অনুমোদন ও তাৎক্ষণিকভাবে টাকা মিলবে কি না। সাধারণত জরুরি প্রয়োজনেই মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নেন। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর দ্রুত অনুমোদিত হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে টাকাও হাতে পেয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশা করা যাবে না। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে টাকা যাতে দ্রুত হাতে পাওয়া যায়, এমন ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত যে ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকে, সেই ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ও সময়সীমা। ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে ভাবতে হবে, এই ঋণ কত দিনে পরিশোধ করতে হবে। বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ থাকলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ কমে যায়। চাপও থাকবে কম। দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৬০ মাস সময়ে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয়। ভেবে দেখতে হবে, আপনার জন্য কিস্তির সময়সীমা কতটা উপযোগী। কিস্তি পরিশোধ কীভাবে করা হবে, তাও নজরে রাখতে হবে। যদি প্রতি মাসে ব্যাংক হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়, ভালো গ্রাহককে তা এক ধরনের স্বস্তি দেয়। অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা যায় কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে। সশরীরে কিস্তি পরিশোধের ঝক্কিঝামেলা এড়ানো যাবে। তৃতীয়ত, সুদের হার আকর্ষণীয় অর্থাৎ সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম কি না। ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার কত, তাও দেখতে হবে। বেশি টাকা দেবে, কিন্তু সুদের হার অনেক বেশি, তাহলে আপনার জন্য তা উপযোগী বা কার্যকর নাও হতে পারে। আবার সুদের হার কম, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা ঋণ দেবে, তাও আপনার জন্য উপযোগী নয়। সুদের হার কম, আবার প্রয়োজন অনুসারে টাকা ঋণ দেবে, এমন ব্যাংকই বেছে নিতে হবে। সুদের হার সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক হয়। এছাড়া প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পুরো ঋণের নির্দিষ্ট অংশ দিতে হয়। সাধারণত দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রসেসিং চার্জ কেটে রাখা হয়। চতুর্থত, জানা প্রয়োজন ন্যূনতম কাগজপত্র দিলেই ঋণ মিলবে কি না। যত কম প্রমানপত্র চাওয়া হয়, গ্রাহকদের তত বেশি সুবিধা। কাগজপত্র জোগাড় করতে ঝামেলা হয়। চাকরিজীবীরা সাধারণত বেতনের বিবরণী দিয়েই আবেদন করেন। সঙ্গে ঋণের জামিনদার বা গ্যারান্টার লাগে। লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও দিতে হয়। এর বেশি কাগজপত্রও চাইতে পারে কোনো কোনো ব্যাংক। ব্যাংক যা দেখে: কেউ ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করে থাকে ব্যাংক। যেমন বয়স, ঠিকানা, আর্থিক সামর্থ্য, গ্যারান্টার ইত্যাদি। সাধারণত ২৫-৬৫ বছর বয়সী গ্রাহকরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক ভেদে এই বয়সসীমা কম বেশি হতে পারে। চাকরিজীবী হলে ন্যূনতম বেতনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংক। যেমন কোনো ব্যাংক বেতন ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা হলেই ব্যক্তিগত ঋণ দেয়। চাকরির স্থায়িত্বও দেখা হয়। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসার লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়। যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, গ্রাহক ও জামিনদারের ছবি, ভিজিটিং কার্ড, ছয় মাস বা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, বিশেষত কর নথির তথ্য ইত্যাদি। বিভিন্ন ব্যাংকের ভোক্তাঋণের অফারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০-২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাঋণ পাওয়া যায়।

ব্যাংক খাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ

ব্যাংক খাতে প্রধান চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে ব্যাংক খাতের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি খেলাপি ঋণের সমস্যার সমাধান করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ আর্থিক খাত সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের সার্বিক হালনাগাদ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বর শেষে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশ। জুন থেকে ডিসেম্বর এ ছয় মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, গত সরকারের সময়ে ব্যাংক দখল করে নজিরবিহীন লুটপাট করা হয়েছে। লুটপাটের টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে ওইসব ঋণ এখন আদায় হচ্ছে না। আদায় না হওয়ার কারণে ব্যাংক সেগুলোকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের এ বৃদ্ধিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফ উদ্বেগজনক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের সমস্যা এখন অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যেসব ব্যাংকে বেশি জালজালিয়াতি হয়েছে, ওইসব ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়ে অতিরিক্ত তরল সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকায়, যা সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে ব্যাংক খাতে সব ধরনের আমানত ও ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। ঋণের সুদের হার বাড়ায় এবং সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে একদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। অন্যদিকে আমানতের সুদের হার বাড়ায় গ্রাহকরা ব্যাংকে সঞ্চয় করতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এছাড়া ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জালজালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও তারল্যের জোগান বাড়ানো হয়েছে। এসব মিলে ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট ধীরে ধীরে কমে আসছে। প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার জন্য উচ্চ খাদ্যমূল্য, পণ্যের সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং অভ্যন্তরীণ অসম্পূর্ণ বাজার কাঠামোকে দায়ী করা হয়েছে। এসব সমস্যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের সার্বিক অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো সামনে রেখে মাঝারি মাত্রার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্য বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে পণ্যমূল্যের স্তরে স্থিতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করছে। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্যও কাজ করছে। ফলে আগামী জুনের মধ্যে এ হার ৮ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘাত, সম্ভাবনা ও সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যব্যবস্থা দেশের অগ্রাধিকার খাতগুলোর বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্প এবং কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাত। এসব খাতের বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিদের জন্য আরও বড় ছাড় : বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবারও বড় ছাড় দিয়েছে। নতুন নির্দেশনায় এক্সিট সুবিধার শর্ত শিথিল করা হয়েছে, যাতে ঋণখেলাপিরা আগের চেয়ে কম ডাউন পেমেন্ট দিয়েই এ সুবিধা নিতে পারেন। সার্কুলারে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদ্যমান ঋণের ন্যূনতম ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদ পরিশোধ করলেই এক্সিট সুবিধার জন্য আবেদন করা যাবে, যা আগে ছিল ১০ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ক্ষমতা বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকার পরিবর্তে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের এক্সিট সুবিধা অনুমোদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ যদি নির্ধারিত কিস্তি অনুযায়ী পরিশোধ না হয় এবং তা খেলাপিতে পরিণত হয়, তাহলে কোনো অবস্থাতেই তা পুনঃতফশিলীকরণ বা পুনর্গঠন করা যাবে না। ব্যর্থ হলে ঋণ আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতার আবেদন পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। সমাধান কোন পথে : অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ঋণখেলাপি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই সমালোচিত একটি বিষয়। বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত ছিল সবচেয়ে ভুক্তভোগী। সুশাসন ও শৃঙ্খলার অভাব এতটাই যে স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে এ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত এত বেশি সমস্যার মুখোমুখি আর কখনো হয়নি। নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ঋণ জালিয়াতি, অবৈধ অর্থ পাচার থেকে শুরু করে শেয়ারবাজারে কারসাজিসহ অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতেই চলেছে দুর্বৃত্তপনা। তারল্য সংকটে পড়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত থেকে শুরু করে আধাসরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এখন খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব বিষয় সুবিবেচনায় আনার প্রয়োজন রয়েছে তা হলো : প্রথমত, ঋণ বিতরণ ও আদায়ে সমতা বিধান করা। ঋণ বিতরণ যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে উৎপাদনশীল খাতে হয়, তাহলে আদয়ে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে ব্যাংকার কাস্টমারের নৈতিকতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। যারা অসাধুতাকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত করে তারা উভয়ই সমান দোষী। এ ব্যাপারে প্রথমে ব্যাংকারদের সতর্ক হতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে গ্রাহকদেরও এই পথ অনুসরণ করতে হবে; দ্বিতীয়ত, দেশের বেসরকারি ও সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত আর্থিক বাজারের অংশ হিসেবে স্বল্প মেয়াদে গৃহীতাদের ঋণের চাহিদা পূরণ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এই ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে চার পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে যার বেশির ভাগ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ঋণ দেওয়া এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার মতো একটি যাতনাকে বয়ে বেড়াচ্ছে যার ফলাফল তারল্য সংকট, মুনাফার ঘাটতি ও ইমেজ সংকট। তৃতীয়ত, ব্যাংকিং খাতে বৃহদাকার ঋণগুলোর স্বচ্ছতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন না হওয়ায় অনেক অলাভজনক খাতেও ঋণ বিনিয়োগ হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক লোন মঞ্জুর করা হয় যার বেশির ভাগ অনুৎপাদশীল খাতে চলে যায়, যার পরিণতি হয় খেলাপি ঋণ। এখন গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে বিচরণ করলেও অন্তত ব্যাংকিংয়ের মতো সেবাধর্র্মী আর্থিক খাতটিকে রাজনীতিমুক্ত রাখা যায় না কেন? এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা, প্রশাসনিক সমর্থন ইত্যাদি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য খুবই জরুরি। সর্বশেষ বলা যায় সরকার যদি সচেষ্ট হয় তবে সমাজিকভাবে এই সকল খেলাপি ঋণের মোকাবিলা করাও সম্ভব আবার প্রশাসনিকভাবেও সম্ভব। এখন কোনটি ভালো হবে তা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে। তবে সমস্যার আবশ্যিক শান্তিুপূর্ণ সমাধান হোক ব্যাংকিং শিল্পের স্বার্থে।

মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের

মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের

নিত্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চালের দাম বাড়লেও কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও মসুর ডালের দাম। আটা, চিনি, আলু ও মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। হালিতে ১ টাকা বেড়ে ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৫ টাকায়। এ ছাড়া একটু একটু করে শাক-সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাপ্তান বাজার, মুগদা বাজার ও খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি’র তথ্যমতে, মোটা জাতের স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম বেড়ে প্রতিকেজি ৫০-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেজিতে দাম বেড়েছে ২ টাকা। এছাড়া সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল আগের দামে ৭২-৮৫ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৭-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। কাপ্তান বাজারের চাল বিক্রেতা নূরু মিয়া জানান, কয়েক সপ্তায় বস্তাপ্রতি  ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে পাইকারি বাজারে। ব্র্যান্ডের সরু চাল প্রতিকেজি ৮৫-৯০ টাকা এবং মোটা জাতের ভাল চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

রিজার্ভ চুরিতে শাস্তি পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তারা

রিজার্ভ চুরিতে শাস্তি পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তারা

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা কমিটি করেছে সরকার। কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা। এ কমিটি ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত কাজের অগ্রগতি ও এ সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। প্রজ্ঞাপন জারির তিন মাসের মধ্যে কমিটি তাদের সুপারিশ দাখিল করবে। সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে। ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ঘটনার ৩৯ দিন পর ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এদিকে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ তথ্য জানান। রিজার্ভ চুরির ঘটনা রিভিউয়ের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা বলেন, সিআইডির তদন্ত যখন ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল (আওয়ামী লীগ আমলে) তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, (রিজার্ভ চুরিতে) বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে, তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়। এভাবে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছিল বলে আজকে সিআইডি থেকে আমরা জেনেছি। বাংলাদেশের যারা অপরাধের জন্য দায়ী ছিল তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য করণীয় ঠিক করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা আমরা জানতে চেয়েছি। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্ক বিচার চলমান। বাংলাদেশে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিউইয়র্কের বিচারের কোনো সমস্যা হবে কি না, এ বিষয়টা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ‘ল’ ফার্মের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনারা ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দু-চার সপ্তাহ দেরি করেছিলেন। এগুলো তখন পত্রিকার রিপোর্টে এসেছে। আরও বেশ কয়েকজনের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে। এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর আবার রিভিউ কমিটির বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। আগামী ২৭ বা ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিডার উদ্বেগ

শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বিডার উদ্বেগ

দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। গ্যাসের দাম বাড়লে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। বিডা  বলেছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ নিরৎসাহিত হবে। ফলে নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন। সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ কথাগুলো জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)। এর আগে গত সোমবার দেশে শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতে নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। এ ছাড়া পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন উদ্বেগ জানিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল বিডাও বিইআরসিকে চিঠি লিখে উদ্বেগ জানিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসি নতুনভাবে গ্যাসের দাম নির্ধারণের ফলে নতুন বিনিয়োগকারীকে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীর তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি দাম দিতে হবে। এই বৈষম্যমূলক নীতি দেশে নতুন বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থাকে নিরৎসাহিত করবে। বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক’ বলে মনে করছেন এবং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী চিঠিতে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সিদ্ধান্তে দেশে  বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। বিডা সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছে না। তবে ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়টি সর্বজনীন করা যেতে পারে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বিডার আয়োজনে ঢাকায় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৪০টি দেশ থেকে প্রায় ৪৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশ নেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা দেখে সম্মেলনে অংশ নেওয়া অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও চুক্তি করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক পরপর  বৈষম্যমূলকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিডা। সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগের স্বার্থে ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন। বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে লেখা চিঠিতে আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘গ্যাসের একটি বিনিয়োগবান্ধব মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে আপনার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। এ বিষয়ে একটি রিভিউ অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট অ্যানালাইসিস ওয়ার্কশপ আয়োজন করা যেতে পারে। দেশে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সম্প্রতি প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প ও ব্যবসায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। দেশে নতুন শিল্প যেন গড়ে না ওঠে এবং বর্তমান শিল্পও যেন চলতে না পারে তার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি ৩টি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা গ্যাসের দামের বিষয়ে এভাবেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দিয়েছেন। শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে একলাফে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।