ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

১,৭০০ শব্দ জানা বিশ্ব রেকর্ডধারী পাখি, তৈরি করত মৌলিক বাক্য!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

১,৭০০ শব্দ জানা বিশ্ব রেকর্ডধারী পাখি, তৈরি করত মৌলিক বাক্য!

ছবিঃ সংগৃহীত

পাক (Puck), ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বাজরিগার (বাড্জি) পাখি, তার বিশাল শব্দভাণ্ডারের জন্য বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। ১৯৯৫ সালে সে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পায়। পাক ১,৭২৮টি শব্দ জানত এবং নিজে থেকে মৌলিক বাক্য তৈরি করতে পারত। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তার মৃত্যু হয়। তার গল্প বাজরিগার পাখিদের চমকপ্রদ বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ হয়ে আছে। এই পাখিরা মানুষের কথার অনুকরণ করে বিশেষ এক অঙ্গ – সিরিনক্স (syrinx) এবং উন্নত মস্তিষ্কের কাঠামোর সাহায্যে।

প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার জগতে কিছু প্রজাতি আমাদের অবাক করে চলেছে। সেই তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বাজরিগার বা পরিচিত ভাষায় প্যারাকিট জাতীয় পাখিরা, যারা মানুষের কথা অনুকরণের অসাধারণ দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। এমনই এক অসাধারণ বাজরিগার ছিল পাক – ক্যালিফোর্নিয়ার পেটালুমার এক নীল রঙের পুরুষ পাখি – যে অসামান্য শব্দভাণ্ডারের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে।

বিশ্বের সর্বোচ্চ শব্দভাণ্ডারের পাখি

পাকের অবিশ্বাস্য ক্ষমতা তাকে ১৯৯৫ সালের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে “বিশ্বের সর্বাধিক শব্দ জানা পাখি” হিসেবে স্থান দেয়। পাক ১,৭২৮টি শব্দ জানত। শুধু অনুমান নয়, তার শব্দের জ্ঞান ছিল সুনির্দিষ্ট। ছয় মাসের সময়কালে ২১ জন স্বেচ্ছাসেবক (যার মধ্যে পাখি বিশেষজ্ঞ ও দুজন পশু চিকিৎসকও ছিলেন) বিভিন্ন সেশন ধরে পাকের বলা শব্দ রেকর্ড করেন। তার মালিক ক্যামিল জর্ডানও অডিও ও ভিডিও ফুটেজ গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ হিসেবে জমা দেন।

নিজে বাক্য গঠন করতে পারত পাক

American Cage-Bird Magazine এবং Bird World-এর তথ্যানুসারে, বেশিরভাগ পাখি যেখানে শুধু শব্দ অনুকরণ করে, সেখানে পাক নিজেই নতুন বাক্য ও কথা গঠন করতে পারত। তার মালিক ক্যামিল জর্ডান স্মরণ করেন, ১৯৯৩ সালের বড়দিনের সকালে পাক খেলারত অবস্থায় বলেছিল, "এটা বড়দিন। এটাই ঘটছে। এটাই সবকিছু। আমি পাকিকে ভালোবাসি। আমি সবাইকে ভালোবাসি।" — যা পাকের যথাযথ প্রসঙ্গে ভাষা ব্যবহারের সক্ষমতা প্রমাণ করে।

কম বয়সেই থেমে যায় পাকের জীবন

দুঃখজনকভাবে, পাকের জীবন ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। ১৯৯৪ সালের ২৫ আগস্ট মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গনাডাল টিউমারের কারণে তার মৃত্যু হয়। তবে পাকের অবদান দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম প্রকাশিত হয়েছে এবং সে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে, বিশেষ করে বে এরিয়ার নিউজকাস্টগুলোতে।

পাকের অতুলনীয় দক্ষতা বাজরিগারদের মেধাগত সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে পুরুষ বাজরিগাররা বিস্তৃত শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে পারে।

পাখিরা কীভাবে কথা বলে?

বাজরিগার ও আফ্রিকান গ্রে প্যারটের মতো কথা বলা পাখিরা মানুষের ভাষার অনুকরণ করে তাদের উন্নত মস্তিষ্কের কাঠামো এবং বিশেষায়িত স্বরযন্ত্র, সিরিনক্স (syrinx)-এর সাহায্যে। স্তন্যপায়ীদের মতো এদের স্বরযন্ত্র নেই; বরং শ্বাসনালী (trachea)-এর গোড়ায় অবস্থিত সিরিনক্সের মাধ্যমে তারা জটিল শব্দ তৈরি করে। তাদের মস্তিষ্কে এমন অঞ্চল থাকে, যা মানুষের শেখা ও স্মৃতির অংশের সাথে তুলনীয়। এ কারণেই তারা শোনা শব্দ মনে রাখতে এবং পুনরুত্পাদন করতে পারে, বিশেষত যখন তারা মানুষের বা অন্য পাখির সাথে সামাজিক বন্ধন তৈরি করে।

মুমু

×