
ছবিঃ সংগৃহীত
এখন চোরেরাও যেন ধর্মের কাহিনি শুনে অনুতপ্ত হয়। মসজিদের খুতবায় ইমামের বয়ান শুনে অনুতপ্ত হন এক চোর। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ২২ বছর আগে করা মোটর চুরির দায় স্বীকার করে মোটরের টাকা ফেরত দিলেন। কোরআন ও হাদিসের আলোচনা শুনে অনুশোচনায় ভোগা চোরের এমন আত্মোপলব্ধি দেখে রীতিমতো হতবাক এলাকার সবাই।
২০০৩ সালে একটি মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়—চুরি। কোরআন ও হাদিসের আলোচনা শুনে তার নিজের মধ্যে অনুশোচনা জাগ্রত হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার রাজনগরে ঘটে এ ঘটনা।
জানা যায়, ২০০৩ সালে পৌর এলাকার টিএনডি সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পানি তোলার একটি মোটর পাম্প চুরি হয়। সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মোটর বা মোটর চোরের সন্ধান পাননি বাড়ির মালিক এনায়েত মুর্শেদ।
এনায়েত মুর্শেদ বলেন, "ঘটনাটা তখন আমাদের নতুন বিল্ডিং হইতেছিল। আমরা একটা নতুন মোটর স্থাপন করি পানির জন্য। তখন বাড়িতে নির্মাণ কাজ চলছিল, এখানে থাকা হতো না। চোর পেছন দিয়ে জমির ভেতর দিয়ে দৌড়ে মোটরটা নিয়ে চলে যায়। আমরা পেছন পেছন অনেক লোক দৌড়াদৌড়ি করলেও তাকে খুঁজে পাইনি।"
এরপর কেটে যায় ২২টি বছর। সেই চুরি যাওয়া মোটরের কথাও একপ্রকার ভুলে যান তারা। তবে হঠাৎ করেই গত ২৫ এপ্রিল এলাকার বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম নামাজের পর এনায়েত মুর্শেদের সঙ্গে এক ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেন। সেই ব্যক্তি ২২ বছর আগে হওয়া মোটর চুরির দায় স্বীকার করে অনুতপ্ত বোধ করেন এবং ক্ষমা চেয়ে চুরির টাকা ফেরত দেন।
এনায়েত মুর্শেদ আরও বলেন, "জুম্মার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে মুফতি মফিজ সাহেব এখানে আসেন। উনি বলেন, ভাই, আপনাদের বাড়ি নির্মাণের সময় মোটরটা চুরি হয়েছিল। আমিও তখন ভুলে গেছি—২০-২২ বছর আগের ঘটনা। ভাইটি বলেন, 'ঘটনার সাথে আমিও জড়িত ছিলাম। আরেকজনের সাথে আমি মোটরটা চুরি করি। কয়েক সপ্তাহ ধরে হুজুরের বয়ান শুনে মনে হলো, এটা ঠিক করি নাই। একটাই সমাধান—মোটরের বিক্রির টাকাটা ফেরত দেওয়া।' তখন সে পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে আমাকে দেয়।"
বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম জানান, মসজিদের খুতবায় কোরআন ও হাদিসের আলোচনা শুনেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন ওই ব্যক্তি। সেই অনুশোচনা থেকেই ২২ বছর পর এসে নিজ থেকেই চুরির দায় স্বীকার করে চুরির টাকা ফেরত দেন। চোরের এমন অনুশোচনা সমাজের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম আরও বলেন, "সে এই মসজিদে প্রায়ই নামাজ পড়তে আসে। গত শুক্রবার আমাদের খতিব সাহেবের বয়ান শুনে তার মধ্যে অনুশোচনা সৃষ্টি হয়। আমাদের খতিব সাহেব একটু ভিন্নধর্মী এবং যুগোপযোগী কিছু বয়ান করেন।"
ইমরান