
ছবি: প্রতিকী
বিটকয়েন মাইনিং—যে প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন তৈরি করা হয়—প্রতি বছর লাখ লাখ আমেরিকানকে ক্ষতিকর বায়ুদূষণের মুখোমুখি করছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা সম্প্রতি Nature Communications সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার নেতৃত্ব দেন ফ্রান্সেস্কা ডমিনিচি, ক্লারেন্স জেমস গ্যাম্বল অধ্যাপক (বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, জনসংখ্যা ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ)। সহ-গবেষক হিসেবে ছিলেন জিয়ানলুকা গুইডি (ভিজিটিং স্কলার) ও ফালকো বারগাল্লি স্টফি (ডিপার্টমেন্ট অ্যাসোসিয়েট), এবং স্কট ডিলানি (গবেষক, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগ)।
পূর্ববর্তী গবেষণায় বিটকয়েন মাইনিংয়ের কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বিষয়টি জানা গেলেও, মাইনিংয়ের কারণে সূক্ষ্ম ধূলিকণার (PM2.5) মতো বায়ুদূষণের সরাসরি প্রভাব সম্পর্কে এতদিন বিস্তারিত জানা যায়নি। উল্লেখ্য, এই ধরণের দূষণ ক্যানসার, হৃদরোগ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষকরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, আর্থিক তথ্য, জমির রেকর্ড, স্যাটেলাইট ইমেজ এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি বিস্তৃত ডেটাসেট তৈরি করেন। এতে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি বৃহত্তম বিটকয়েন মাইনের অবস্থান ও বিদ্যুৎ সক্ষমতার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তাঁরা ৬৩৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র শনাক্ত করেন, যেগুলো এই মাইনগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল এবং এর ফলে সৃষ্ট বায়ুদূষণ ও তার গমনপথ বিশ্লেষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়কালে ৩৪টি বিটকয়েন মাইন লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে, যার অধিকাংশই এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এর ফলে প্রায় ১৯ লাখ আমেরিকান উচ্চমাত্রার PM2.5 দূষণের শিকার হয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটি, হিউস্টন/অস্টিন মেট্রোপলিটন এলাকা, উত্তর-পূর্ব টেক্সাস ও ইলিনয়-কেন্টাকি সীমান্তের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গবেষকরা আরও দেখিয়েছেন, এক রাজ্যের বিটকয়েন মাইন অন্য রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে পারে, আর সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ আবার তৃতীয় আরেকটি রাজ্যের বাসিন্দাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, "উদাহরণস্বরূপ, ইলিনয়ের মেট্রোপলিস শহরের বাসিন্দারা এমন PM2.5 দূষণের শিকার হচ্ছেন, যা কেন্টাকির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিঃসৃত, যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আবার উত্তর ক্যারোলিনার একটি বিটকয়েন মাইনকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।"
এই রাজ্য-সীমান্ত পেরিয়ে বায়ুদূষণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। কারণ, একটি রাজ্য অন্য রাজ্যের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গবেষক স্কট ডিলানি সম্প্রতি Decrypt ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (EPA) চাইলে আপস্ট্রিম (উপরিভাগীয়) রাজ্যগুলিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্গমন সীমা কঠোর করতে নির্দেশ দিতে পারে। এছাড়াও, বিটকয়েন মাইনিংয়ের স্থান নির্ধারণে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: https://hsph.harvard.edu/news/bitcoin-mining-increases-levels-of-air-pollution-harmful-to-human-health/
রবিউল হাসান