
ছবি : সংগৃহীত
তাজ মহল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভগুলির একটি, যা চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এর অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই স্থানটি পরিদর্শনে আসেন। সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করেন এবং এটি বর্তমানে ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।
তবে এই সাদা মার্বেলের নিচে থাকা ভূমির ইতিহাস অনেকেই জানেন না, এবং সেটিও তাজ মহলের মতোই আকর্ষণীয়। সাধারণভাবে তাজ মহলকে মুঘল যুগের নিদর্শন হিসেবে ধরা হলেও, ঐতিহাসিক নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, এই জমি মূলত মুঘলদের নয়, বরং রাজপুতদের অধীনে ছিল এবং এটি বলপূর্বক দখল করা হয়নি বরং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বিনিময় করা হয়।
মমতাজ মহলের মৃত্যু হয় ১৬৩১ সালে বুরহানপুরে এবং প্রথমে তার দেহ সেখানেই সমাহিত করা হয়। ছয় মাস পর তার দেহ আগ্রায় আনা হয় এবং যেই জমিতে তাজ মহল নির্মাণ করা হয়, সেটি তখন রাজপুত রাজা মির্জা রাজা জয় সিং-এর মালিকানাধীন ছিল।
মুঘল দলিল ‘পাদশাহনামা’-তে বলা হয়েছে, জয় সিং ঐ জমি শাহজাহানকে দান করেন, যা আগে তার পিতামহ রাজা মান সিং-এর ছিল। ঐ জমিতে একটি বিশাল গম্বুজাকৃতি ভবনও ছিল বলে উল্লেখ আছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ এর প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাজা জয় সিং ছিলেন শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং জমিটি দান করেছিলেন, কোনো জবরদস্তি ছিল না। বরং বিনিময়ে তিনি আগ্রার চারটি হাভেলি পান, যা একটি রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল। ফরমানে বলা হয়, “চারটি হাভেলি ও সংশ্লিষ্ট জমি রাজা জয় সিংকে দান করা হয় রাজা মান সিং-এর পূর্বতন হাভেলির বিনিময়ে, যা তাজ মহল নির্মাণের জন্য তিনি স্বেচ্ছায় দান করেছিলেন।”
এই জমির আদান-প্রদান শুধু মুঘল ও রাজপুতদের মধ্যে সুসম্পর্কের প্রমাণই নয়, বরং এটি রাজনৈতিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার একটি নিদর্শন। রাজা জয় সিং শুধু একজন প্রভাবশালী রাজপুত রাজাই ছিলেন না, বরং মুঘল দরবারে তার সামরিক নেতৃত্ব এবং বিশ্বস্ততার জন্যও পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম India.com-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজেপি সংসদ সদস্য তথা জয়পুর রাজপরিবারের সদস্য দিয়া কুমারীও গণমাধ্যমে দাবি করেন যে, তাজ মহলের জমি তাদের পূর্বপুরুষদের ছিল এবং এর বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছিল। যদিও তিনি ক্ষতিপূরণের বিস্তারিত জানাননি।
তাজ মহল যেমন ভালোবাসার প্রতীক, তেমনি এটি যুগপৎভাবে দুটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের-মুঘল এবং রাজপুতদের-সহযোগিতা ও সহাবস্থানেরও প্রতীক। এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে এবং শেষ হয় ১৬৫৩ সালের দিকে। এতে ২০,০০০-এরও বেশি শিল্পী ও শ্রমিক অংশ নেয়, যারা মুঘল সাম্রাজ্য এবং বাইরের অঞ্চল থেকেও এসেছিলেন।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
আঁখি