
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর উন্নতির মধ্যেও ইতিহাসের প্রতি মানুষের কৌতূহল কমেনি। প্রাচীন খনিতে খনন থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ—সব কিছুই অতীতকে জানার ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টারই অংশ। আজও পৃথিবীর কিছু স্থান সময়ের সীমানায় স্থির হয়ে আছে, যেগুলো মানুষকে নিয়ে যায় অতীতের এক ঝলকে। চলুন জেনে নিই এমন ৭টি বিস্ময়কর স্থান সম্পর্কে যেগুলো ইতিহাসে জমে থাকা এক একটি চিত্র।
১. মিয়োরিউজি (নিনজা) মন্দির, জাপান
জাপানের কানাজাওয়াতে অবস্থিত মিয়োরিউজি মন্দির, যা ‘নিনজা টেম্পল’ নামেও পরিচিত, ১৬৪৩ সালে গোপন এক সশস্ত্র ঘাঁটি হিসেবে নির্মিত হয়। এর গোপন কক্ষ, ফাঁদ লাগানো দরজা, ও গোপন টানেলগুলো এই মন্দিরকে নিনজাদের আখড়া মনে করিয়ে দেয়। বাইরে থেকে দুইতলা মনে হলেও এর প্রকৃত তলা সংখ্যা চারটি। এটি কাগা শাসক মােদা পরিবারকে ঘিরে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
২. ওয়েসিস বোর্ডেলো মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র
আইডাহো অঙ্গরাজ্যের এই জাদুঘরটি এক সময় ছিল একটি সক্রিয় পতিতালয়, যা ১৯৮৮ সালে হঠাৎ করেই পরিত্যক্ত হয়। বাসিন্দারা তড়িঘড়ি চলে যাওয়ায় তাদের ব্যক্তিগত সামগ্রী থেকে শুরু করে খাবারের সামগ্রীও রয়ে গেছে অক্ষত। পরবর্তীতে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী এটি কিনে জাদুঘরে রূপান্তর করেন।
৩. গোথল্যান্ড স্টেশন, ইংল্যান্ড
হ্যারি পটার সিনেমায় হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসের স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত এই স্থানটির নাম গোথল্যান্ড স্টেশন। এখানকার ঐতিহ্যবাহী টি রুম, লাল রঙের সেতু এবং আশেপাশের প্রকৃতি দর্শনার্থীদের একেবারে অন্য এক সময়ে নিয়ে যায়।
৪. রোভাইওলো ভেককিওর ভূতুড়ে গ্রাম, ইতালি
ইতালির রোভাইওলো ভেককিও গ্রামটি ১৯৬০ সালে সম্ভাব্য ভূমিধ্বসের আশঙ্কায় খালি করা হয়। বাসিন্দারা নদীর ওপারে নতুন গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন, তবে পরে সেই নতুন গ্রামই ধ্বংস হয় ভূমিধ্বসে। আশ্চর্যের বিষয়, পুরনো গ্রামটি আজও অক্ষত আছে—টেবিলে রাখা চশমা থেকে শুরু করে মেঝেতে পড়ে থাকা বোতল সবই সময়ের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
৫. হলিডে নস্টালজিয়া ট্রেন, যুক্তরাষ্ট্র
নিউ ইয়র্ক শহরে ডিসেম্বর মাসে প্রতি রবিবার এই বিশেষ ট্রেনটি চলে, যা ১৯৩০-এর দশকের রেট্রো ট্রেন কার নিয়ে তৈরি। এই ট্রেনে উঠে যাত্রীরা যেন ফিরে যান ছুটির পুরনো দিনের উষ্ণতায়।
৬. ভ্যালেন্টিন বান্কার মেমোরিয়াল, জার্মানি
জার্মানির ব্রেমেনে অবস্থিত এই সাবমেরিন বান্কারটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলচাপ-বান্কার। নাৎসি বাহিনী ১৯৪৩ সালে সাবমেরিন নির্মাণের জন্য এটি তৈরি করে। যদিও একটিও সাবমেরিন সম্পন্ন হয়নি, তবুও প্রায় ১,৬০০ শ্রমিক এখানে প্রাণ হারান। বর্তমানে এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত “ডেনকওর্ট বান্কার ভ্যালেন্টিন” নামে।
৭. লিগাটনে সোভিয়েত গোপন বান্কার, লাটভিয়া
লাটভিয়ার লিগাটনে একটি স্পা সেন্টারের নিচে প্রায় ৯ মিটার গভীরে নির্মিত এই গোপন সোভিয়েত বান্কারটি নির্মিত হয়েছিল ঠান্ডা যুদ্ধের সময়। এটি পারমাণবিক হামলার সময় দেশের অভিজাতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। একে একবারে ২৫০ জন মানুষ তিন মাস পর্যন্ত আশ্রয় নিতে পারতেন।
এই জায়গাগুলো শুধুই পর্যটন গন্তব্য নয়, বরং একেকটি জীবন্ত ইতিহাসের দলিল। আধুনিকতার মাঝেও এমন স্থানগুলো প্রমাণ করে, মানুষ অতীতকে মনে রাখে, ভালোবাসে এবং তা থেকে শিক্ষা নিতে চায়।
রিফাত