ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

চাঁদ, প্রকৃতি এবং পুরাণ

প্রকাশিত: ১৯:২২, ২২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:৩০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

চাঁদ, প্রকৃতি এবং পুরাণ

ছবি: প্রতীকী

পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। রাতের আকাশের এক অপরূপ সৌন্দর্য। চাঁদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নানা কবি রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা।

এই চাঁদকে ঘিরে রয়েছে নানা আকর্ষণীয় ও বিস্ময়কর তথ্য।

চাঁদের দুটি পক্ষ আমরা দেখতে পাই, শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। নতুন চাঁদ ওঠার দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন চলে শুক্লপক্ষ। এই ১৫ দিনে চাঁদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শুক্লপক্ষের শেষে, অর্থাৎ ১৫তম দিনে চাঁদের পূর্ণ রূপ আমরা দেখতে পাই, যেটিকে আমরা পূর্ণিমা বলি। 

পূর্ণিমার পরদিন থেকে শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষ। পরবর্তী ১৪ দিন চাঁদ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে থাকে এবং ১৫তম দিনে চাঁদকে আর রাতের আকাশে দেখা যায় না। এটিই অমাবস্যা।

চাঁদের এই বাড়া-কমাকেই বলা হয় চন্দ্রপক্ষ। প্রাচীনকালে মানুষ এই চন্দ্রপক্ষের মাধ্যমে সময় গণনা করত। 'মাস' শব্দটি এসেছে ইংরেজি 'Moon-th' (Moon+Month) থেকে।

চাঁদের এই পূর্ণ হওয়া ও ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার বিষয় যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, বছরের ১২টি পূর্ণিমার প্রত্যেকটিরই রয়েছে আলাদা নাম।

 

কেন এই নামকরণ___

এই নামগুলোর উৎপত্তি মূলত উত্তর আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতি থেকে, যা পরে ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়েছে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে।  

এই নামগুলোর সাথে চাঁদের রঙ পরিবর্তন হওয়া বা চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রতিচ্ছবি দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এগুলো বছরের ঋতু, কৃষিকাজ বা প্রাকৃতিক ঘটনাকে নির্দেশ করে।

 

বারোটি পূর্ণিমার নাম ও তাৎপর্য____

জানুয়ারি: ওলফ মুন (নেকড়ে চাঁদ)
হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার এই মাসে, যখন খাদ্য পাওয়া যায় না, তখন নেকড়েদের কান্নার মতো ডাক ভেসে আসে বন থেকে। অন্য সময়ের তুলনায় এই সময় নেকড়েদের ডাক বেশি শোনা যায়। এই চাঁদের নাম সেই কাহিনিকেই ধারণ করে।

 

ফেব্রুয়ারি: স্নো মুন (তুষার চাঁদ)
ফেব্রুয়ারি মানেই উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি তুষারপাত। এই তুষারের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের চাঁদকে ডাকা হয় তুষার চাঁদ বা স্নো মুন হিসেবে।
তুষারের চাদরে ঢাকা পৃথিবীতে শিকার করাও দুরূহ হয়ে পড়ে। সেখান থেকে এটি “হাঙ্গার মুন” নামেও পরিচিত।

 

মার্চ: ওয়ার্ম মুন (কৃমি চাঁদ)
বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে এই চাঁদ। জমি আলগা হয় এবং কেঁচোজাতীয় কীটপতঙ্গের চলাফেরা শুরু হয়। প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে আসে।

কিছু জাতি একে বলে "স্যাপ মুন" বা “ম্যাপল রসের চাঁদ” কারণ এ সময় ম্যাপল গাছের রস সংগ্রহ করা হয়।

 

এপ্রিল: পিংক মুন (গোলাপি চাঁদ)
চাঁদটি কিন্তু গোলাপি রঙের নয়। এর নাম এসেছে গোলাপি রঙের ফুল ‘ফ্লক্স’-এর নাম থেকে। এটাই বছরের প্রথম বসন্ত পূর্ণিমা এবং এ সময় প্রকৃতিতে অনেক গোলাপি রঙের ফুল ফুটতে দেখা যায়।

মে: ফ্লাওয়ার মুন (ফুলের চাঁদ)
এ সময় প্রকৃতির পসরা সবচেয়ে রঙিন হয়। তাই একে বলা হয় ‘ফুলের চাঁদ’।
 

কৃষিজ জাতিগোষ্ঠীরা একে ‘কর্ন প্ল্যান্টিং মুন’ বা শস্য রোপণের চাঁদ কিংবা ‘মিল্ক মুন’ বলেও ডাকে।
মে মাসের ১২ তারিখ এই পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যাবে।

 

জুন: স্ট্রবেরি মুন (স্ট্রবেরি চাঁদ)
এই সময়ে উত্তর আমেরিকায় স্ট্রবেরি সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়। পাকা স্ট্রবেরি সংগ্রহ করার সময় থেকেই এই নামের উদ্ভব।
 

জুনের ১১ তারিখ এই চাঁদের পূর্ণিমা দেখা যাবে।

 

জুলাই: বাক মুন (হরিণের চাঁদ)
এই সময় পুরুষ হরিণদের শিং আবার গজাতে শুরু করে। সেখান থেকে এই নামের উৎপত্তি। এই সময় বজ্রপাতও বেশি হয়, তাই একে ‘থান্ডার মুন’ও বলা হয়।
 

এই মাসের পূর্ণিমা দেখা যাবে মাসের ১০ তারিখে।

 

আগস্ট: স্টারজন মুন (স্টারজন মাছের চাঁদ)
গ্রেট লেকস ও অন্যান্য বড় জলাশয়ে স্টারজন মাছ ধরার শ্রেষ্ঠ সময় এটি। গ্রীষ্মের কুয়াশায় চাঁদ কখনও রক্তিম দেখায়, এজন্য এটি ‘রেড মুন’ নামেও প্রচলিত।

স্টারজন মাছের চাঁদ দেখা যাবে মাসের ৯ তারিখে।

 

সেপ্টেম্বর: কর্ন মুন (ভুট্টা/ শস্য চাঁদ)
শস্য সংগ্রহের সময় হওয়ায় এই চাঁদ কৃষকদের রাতেও কাজ চালাতে সাহায্য করে। সাধারণত একে বলা হয় ‘হারভেস্ট মুন’, কিন্তু ২০২৫-এ সেটি হবে অক্টোবর মাসে।
 

সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণিমা দেখা যাবে সাত তারিখে।

 

অক্টোবর: হারভেস্ট মুন (শস্য চাঁদ)
শরৎকালীন বিষুবের কাছাকাছি হওয়ায় এই চাঁদ বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এই সময় কৃষকরা শস্য ঘরে তোলে।
 

এই চাঁদের উদয় প্রতিরাতেই প্রায় একই সময়ে হয়, যা এক ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য।
শস্য চাঁদের দেখা মেলবে মাসের ৬ তারিখে।

 

নভেম্বর: বিবার মুন (বিবারের চাঁদ)
অনেকে মনে করেন, এই সময় বিবাররা (এক ধরনের প্রাণী যা জলাভূমিতে বাস করে এবং নিশাচর) নিজেদের বাঁধ তৈরি করে। আবার কেউ বলেন, শিকারিরা এ সময় বিবারের ফাঁদ পাতে, শীতে বিবারের চামড়া সংগ্রহের জন্য।
 

বিবার চাঁদের দেখা মিলবে মাসের ৫ তারিখে।

 

ডিসেম্বর: কোল্ড মুন (শীতল চাঁদ)
শীতের দীর্ঘ রাত আর হিমেল বাতাসের প্রতীক এই পূর্ণিমা। এটি ‘লং নাইট মুন’ নামেও পরিচিত, কারণ এই সময় রাত দীর্ঘতর এবং চাঁদ আকাশে দীর্ঘ সময় থাকে।
 

এই চাঁদ দেখা যাবে মাসের ৪ তারিখে।

 

ব্লু মুন

এছাড়া আরেকটি দুর্লভ ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যাকে ‘ব্লু মুন’ বা নীল চাঁদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণত একটি মাসে একটি পূর্ণিমা হয় এবং একটি ঋতুতে তিনটি পূর্ণিমা হয়। কিন্তু যদি একটি মাসে দুটি পূর্ণিমা হয়, বা একটি ঋতুতে চারটি পূর্ণিমা হয়, তাহলে সেটাকে ব্লু মুন বা নীল চাঁদ বলা হয়।

শেষ নীল চাঁদ দেখা গিয়েছিল ১৯ আগস্ট, ২০২৪ সালে। পরবর্তী নীল চাঁদ দেখা যাবে ৩১ মে, ২০২৬ সালে।

 

 

 

তথ্যসূত্র
https://www.space.com/39238-full-moon-names.html


 

সুরাইয়া

×