
ছবি : সংগৃহীত
কিন্তু আধুনিকায়নের এই যুগে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন শুধু জীবনযাত্রার ধরনেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে রান্নার পদ্ধতি ও তৈজসপত্রেও ব্যাপক রূপান্তর ঘটেছে।
অতীতে মানুষ মাটির তৈরি বাসনপত্রে রান্না করত, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি হারিয়ে গেছে। আজকের আধুনিক যুগে মানুষ নন-স্টিক প্যানে রান্না করতে অভ্যস্ত, কারণ এটি রান্নাকে সহজ ও দ্রুততর করে। কিন্তু এই নন-স্টিক প্যানের ভয়াবহ দিক সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। এটি হয়তো রান্নায় তেলের পরিমাণ কমায় এবং সময় বাঁচায়, কিন্তু এর বিপদ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক।
গবেষণায় দেখা গেছে, নন-স্টিক প্যানে সামান্য একটি স্ক্র্যাচ থেকেই প্রায় ৯,০০০ বিষাক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হয়। আর যদি এর প্রলেপ সম্পূর্ণ উঠে যায়, তাহলে এই সংখ্যা ২০ লাখ পর্যন্ত* পৌঁছাতে পারে, যা প্রতিবার রান্নার সময় খাবারের সাথে মিশে যায়। নন-স্টিক প্যান, খুন্তি এবং অন্যান্য রান্নার সরঞ্জামে ব্যবহৃত টেফলন কোটিং আসলে একটি ফরেভার কেমিক্যাল (PFAS), যা প্লাস্টিক জাতীয় পলিমার। এটি সাধারণ প্লাস্টিক নয়, বরং একটি চিরস্থায়ী রাসায়নিক, যা পরিবেশ বা মানবদেহে কখনোই সম্পূর্ণভাবে ভাঙে না। একে 'চিরস্থায়ী বিষ' বললেও অত্যুক্তি হবে না।
এই রাসায়নিকগুলি সময়ের সাথে সাথে খাবারে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত নন-স্টিক প্যান ব্যবহারের ফলে পুরুষ ও নারী উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এটি শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই রাসায়নিকগুলি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা থেকে নানা জটিল রোগের সূত্রপাত হয়।
জীবনকে সহজ ও আধুনিক করার এই প্রবণতা পাশ্চাত্য দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। নন-স্টিক প্যানের ব্যবহারও সেখান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ৯৯% আমেরিকানের রক্তেই বিভিন্ন মাত্রায় এই ফরেভার কেমিক্যাল পাওয়া গেছে। আমেরিকানরা জীবনযাপনকে সহজ করতে সবসময় শর্টকাট পদ্ধতিতে বিশ্বাসী, তাই রান্নার ক্ষেত্রেও তারা নন-স্টিকের মতো দ্রুততম সমাধানকে প্রাধান্য দেয়। তবে তাদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে হৃদরোগ এখনও মৃত্যুর প্রধান কারণ। কিন্তু ধনী দেশগুলিতে হৃদরোগের চেয়ে ক্যান্সার বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, শীঘ্রই গোটা বিশ্বে হৃদরোগের চেয়ে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি হয়ে যাবে। আর এই ক্যান্সারের একটি বড় উৎস 'নন-স্টিক কুকওয়্যার' ।
সুতরাং, আধুনিকতার নামে আমরা যে সুবিধাগুলো নিচ্ছি, তা আসলে আমাদের অজান্তেই ধীরে ধীরে আমাদের জীবনকে সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রাচীন ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়াই হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ। মাটির হাড়ি, স্টিল বা কাস্ট আয়রনের পাত্রে রান্না করা, নন-স্টিকের বিকল্প হিসেবে সিরামিক বা কাচের পাত্র ব্যবহার করা- এসবই হতে পারে নিরাপদ জীবনযাপনের সহজ সমাধান।
সূত্র:https://youtu.be/EKic-Xjb1HI?si=fOrMhW5GzT5GfTNd
আঁখি