
ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বের কোটি কোটি মা সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ করে থাকেন। তবে কেউ কেউ শুধু পরিবারের জন্য নয়, একটি গোটা পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও হয়ে ওঠেন মমতার প্রতীক। তেমনই একজন মা হলেন ইন্দোনেশিয়ার বাসিজা, যিনি গত ২০ বছর ধরে সমুদ্রের বুক চিরে গড়ে তুলেছেন কয়েক লাখ গাছের এক বিশাল ম্যানগ্রোভ বন।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের রেজোসারি সেনিক গ্রামে বাসিজা ও তার পরিবার বসবাস করেন সমুদ্রের মাঝে একটি একক বাড়িতে, যেখানে চারপাশে আর কোনো স্থায়ী বসতি নেই। একসময় এই গ্রামটি ছিল শুষ্ক ও জনবসতিপূর্ণ, কিন্তু ধীরে ধীরে সমুদ্র গ্রাস করতে থাকে পুরো অঞ্চলটি। গ্রামের অন্যান্য পরিবাররা এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও বাসিজা ও তার পরিবার থেকে যান ভিটেমাটি আঁকড়ে।
৫৫ বছর বয়সী বাসিজা তার বাড়ির মেঝে বাঁশ ও পুরনো বৈদ্যুতিক খুঁটির সাহায্যে উঁচু করে তোলেন, যেন জোয়ারের পানি ঘরে না ঢোকে। প্রতিদিন তাদের ঘুম ভাঙে সাগরের গর্জনে। নিকটতম ভূমি প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে এবং সবচেয়ে কাছের শহর প্রায় ১৯ কিলোমিটার। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেই চলে তাদের জীবিকা।
সমুদ্রের জলজ স্রোত ও উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে একের পর এক বাড়ি পানিতে তলিয়ে যেতে থাকলেও বাসিজা হার মানেননি। বরং তিনি সিদ্ধান্ত নেন, গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক ঢাল তৈরি করবেন। রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাসিজা জানান, বন্যার পানি একেবারে আসে না—ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। তখনই তিনি বুঝতে পারেন, একমাত্র সমাধান হচ্ছে ম্যানগ্রোভ গাছ।
প্রতিদিন একটি ভেলার সাহায্যে বাসিজা বুক সমান পানিতে নেমে গাছের চারা রোপণ করেন। এভাবে ২০ বছর ধরে গড়ে তুলেছেন হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ, যা আজ তাদের বাড়ির চারপাশে এক শক্তিশালী প্রাকৃতিক বেস্টনি তৈরি করেছে। এটি স্রোত, বন্যা ও ঝড় থেকে তাদের রক্ষা করছে।
ইন্দোনেশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, যার উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮১ হাজার কিলোমিটার। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দেশটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর একটি। এই প্রেক্ষাপটে বাসিজার এই একক প্রচেষ্টা শুধু তার পরিবার নয়, গোটা জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা।
আঁখি