
ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক এবার একটি অপ্রত্যাশিত ইস্যুতে শিরোনামে রয়েছেন। টেসলা, স্পেসএক্স, এক্স (টুইটার) এবং নিউরালিংকের মতো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক মাস্ক এবার চাইছেন বিশ্বজুড়ে তার সন্তান সংখ্যা বাড়াতে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাস্ক ইতিমধ্যে চারজন নারীর সঙ্গে ১৪টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু তিনি এখানেই থামতে চান না। তার লক্ষ্য হলো আরও বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, যাকে তিনি "বিশ্বজুড়ে সন্তান বাহিনী" তৈরির উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাস্ক তার জনপ্রিয়তা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে একের পর এক প্রভাবশালী নারীকে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছুকে গর্ভভাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে গোপনীয়তা চুক্তি স্বাক্ষর করানো হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, ২৬ বছর বয়সী মার্কিন ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাশলে সেন্ট ক্লিয়ার মাস্কের ১৩তম সন্তানের জন্ম দেন। অ্যাশলে দাবি করেছেন, সন্তান জন্মদানের পর মাস্ক তাকে এই তথ্য গোপন রাখতে বিপুল অর্থের বিনিময়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন, যদিও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে বিষয়টি ফাঁস করেন।
এছাড়াও, জাপানের ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনফ্লুয়েন্সার টিফানি ফংয়ের কাছেও মাস্ক সন্তান জন্মদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তিনি ফিরিয়ে দেন। এসব ঘটনা মাস্কের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
মাস্কের এই উদ্যোগের পেছনে তার যুক্তি হলো- বিশ্বব্যাপী জন্মহার কমে যাওয়ায় মানব সভ্যতা হুমকির মুখে। তিনি মনে করেন, জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলায় তাকে নিজেই এগিয়ে আসতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বারবার সতর্ক করে আসছেন যে, কম জন্মহার ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
তবে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনকে তিনি "নিম্নমানের গসিপ" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার সমর্থকরা দাবি করেন, এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং তিনি জনসংখ্যা সংকট নিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন।
মাস্কের এই পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদল এটিকে "উদ্ভট কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ" বলে দেখছেন, আবার অন্যরা প্রশ্ন তুলছেন—এত সন্তানের পেছনে তার নৈতিক দায়িত্ব কতটুকু? বিশেষ করে গর্ভভাড়া ও গোপন চুক্তির অভিযোগগুলো নীতিগতভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য?
কিছু সমালোচক বলছেন, মাস্কের এই পদক্ষেপ তার ধন-সম্পদ ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একটি "ব্যক্তিগত ডাইনেস্টি" তৈরি করার চেষ্টা মাত্র। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, যদি সত্যিই তিনি বিশ্ব জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলা করতে চান, তাহলে এর জন্য সামাজিক প্রকল্প বা গবেষণায় বিনিয়োগ করাই বেশি যুক্তিসঙ্গত হতো।
ইলন মাস্কের এই পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর। এটি তার ব্যক্তিগত জীবন, নৈতিকতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। জন্মহার সংকট একটি বাস্তব সমস্যা হলেও, মাস্কের এই পদ্ধতি কতটা গ্রহণযোগ্য বা ন্যায্য- তা নিয়েই বিতর্ক চলবে। একদিকে তার উদ্ভাবনী চিন্তা বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে, অন্যদিকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত তাকে আরও বিতর্কের মুখে ফেলছে। ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা কীভাবে এগোবে, তা সময়ই বলবে।
আঁখি