
মানুষ যখন যাপিত জীবনে হরেক বিপন্নতার শিকার হয় তখন বেঁচে থাকাটাও দায় হয়ে পড়ে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত যোগসাজশে সমাজ ব্যবস্থার ভিত তৈরি এবং ক্রমান্বয়ে মজবুতও হয়। কিন্তু শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শুধু বিত্ত কিংবা নির্বিত্তের লড়াই যেমন একইভাবে আভিজাত্যের দ্বন্দ্ব মানুষের মধ্যে ক্রমশ দানা বাঁধে সেটাও সমাজ সংস্কারের কঠিন পরিক্রমা। সবচেয়ে বেশি করে দৃশ্যমান হয় নারী-পুরুষের বিভাজন-ক্রমাগত বঞ্চনার ইতিবৃত্তও। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দৃশ্যমান হচ্ছে ঐতিহ্যিকে সমাজ ব্যবস্থা থেকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সমৃদ্ধ বলয়ে নারী-পুরুষের অসমতা, বৈষম্য আর অধিকারহীনতার দৃশ্যও প্রকটভাবে উন্মোচিত। সঙ্গত কারণে হরেক বিপরীত প্রদাহও সমসংখ্যক নারীকে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। তেমন দুর্বিষহ অবস্থায় মরণের পথ বেছে নিতেও তারা থমকে দাঁড়ায় না। সবার ওপরে পারিবারিক কলহই মূল কারণ বলে বিশিষ্টজনদের অভিমতে উঠে আসে। থাকে পরকীয়ার মতো আর এক অবৈধ সম্পর্ক। সেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই সম্পৃক্ত থাকলেও সব কিছুর মূলে নারীকেই দাঁড় করানো হয়। বিশিষ্টজনরা আরও বলছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজই শুধু নয় এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় সুযোগ-সুবিধাও বর্তায় পুরুষদের ওপরই। বঞ্চিত নারী সমাজ বর্তমানে আধুনিকতার বলয়ে তাদের সহজাত অধিকার, স্বাধীনতা অর্জন করলেও তেমন সংখ্যা নগণ্যই বলা যায়। আর অঞ্চলভেদে যেমন শহর, নগর, বন্দর আর গ্রামে এমন তারতম্য দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। আত্মহত্যায়ও নিগৃহীত, নিপীড়িত সাধারণ মানুষরাই এগিয়ে থাকে। আবার সিংহভাগই অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া নারী। যাদের কষ্ট, দুঃখ, বেদনা লাঘব করার সুযোগ কম থাকে। সেখানে শুধু যে পুরুষতান্ত্রিকতা ভর করে তা কিন্তু নয়Ñ বরং নারীরাও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। ফলে বিপন্নতার আবর্তে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করাই যেন শেষ সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে শাশুড়ি, বউমা, ননদ, জাÑ এমনকি মা আর কন্যা পর্যন্ত বিভিন্ন তর্ক-বিতর্ক আর সীমাহীন বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার দৃশ্য বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। আবার এখনো মেয়েরা কর্মজীবনে সেখাবে সম্পৃক্ত হতে না পারাও বিষন্ন আর হতাশায় ভোগা বিভিন্ন চিত্রে অসহনীয়ভাবে উঠে আসছে। সেখান থেকেও আত্মহত্যায় প্ররোচিত হতে বাধ্য হওয়ার দৃশ্য সত্যিই বেদনাদায়ক। তবে অনেক বিজ্ঞজনের পরামর্শ আত্মহত্যা কে নো সমাধান নয়। বরং উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার সমাধানও জরুরি। কোনো মানুষের জীবন নিরবচ্ছিন্ন সুখ, দুঃখ, ব্যথা কিংবা আনন্দের নয়। জীবনে যেমন স্বচ্ছন্দ গতি আছে পাশাপাশি হরেক অপমান, অসম্মান অধোগতিও জীবনকে বিষময় করে তোলে। সেখানে ঠান্ডা মাথায় বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়াও যথার্থ মানুষের পরিচয়। নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ কোনোভাবেই নয়। বরং সমস্যা কলুষিত জীবনকে সাহসিক মনোবলে নবউদ্যোমে ঘুরে দাঁড়ানোর অপর নামই যথার্থ জীবন, স্বচ্ছন্দ গতিপথ। বিপরীত প্রদাহকে সম্মুখ সমরে মোকাবিলা করে চলার পথকে নির্বিঘ্ন, নিষ্কণ্টক ও গতিময় করে তুলতে পারলেই ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরম প্রাপ্তি। তাই বিষণ্ন্ন কিংবা সকাতর অনুভব যেন ক্ষণিকের বেদনার মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। সেখানে আলোকিত হবে চলার পথের গতিময় দ্বন্দ্ব, সুখ-দুঃখ, আনন্দ বিনোদনে। তাই আত্মহত্যা আর নয় বরং সম্মুখ বিপদাপন্ন সমরকে সৎ সাহস আর মূল্যবান জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়াই চলার পথের পরম বরমাল্য।
অপরাজিতা প্রতিবেদক
প্যানেল