ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

টিকিয়ে রাখার দাবি তরুণদের

হারাতে বসেছে নির্মল বিনোদন পুতুল নাচ

রাজু মোস্তাফিজ  

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

হারাতে বসেছে নির্মল বিনোদন পুতুল নাচ

.

এদেশের লোকসংস্কৃতির অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম পুতুলনাচ। লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও পুতুলনাচ জনপ্রিয়। গ্রামবাংলার বিভিন্ন মেলা, উৎসবে বসত এই পুতুলনাচ। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের জগতে হারিয়ে যেতে বসেছে এই লোকসংস্কৃতি। পহেলা  বৈশাখ উপলক্ষে কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ। বর্ষবরণের দিন মানুষকে আনন্দ দিতে কুড়িাম সদরের কুড়ি ইকো পার্কে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় পুতুল নাচের। পুতুলনাচের কয়েকটি শোতে প্রদর্শন করা হয় বাল্যবিয়ে রোধসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক নাটক ও হারানো দিনের গান।  কুড়ি ইকো পার্কে দিনব্যাপী এ পুতুলনাচ দেখতে ভিড় জমায় নারী, শিশু, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বিশেষ করে পুতুলনাচ দেখে সবচেয়ে আনন্দ পায় শিশু কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় হলেও সুস্থ ও শিক্ষণীয় বিনোদনের জন্য পুতুলনাচ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দাবি তরুণদের। পুতুলনাচের কারিগররা মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য এ ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ ধরে রাখলেও আকাশ সংস্কৃতির যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় অনেকটাই জীবিকা সংকটে পড়েছেন এর কারিগররা। গ্রাম বাংলার আদি ঐতিহ্য পুতুলনাচ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন।

শুধু নববর্ষের দিন পুতুলনাচ হলেও অন্যান্য দিন তাদের কেউ খোঁজখবর রাখে না। ডাকেও না কেউ। নতুন প্রজন্মের মানুষ ধীরে ধীরে পুতুলনাচ সম্পর্কে ধারণা হারিয়ে ফেলছে। এই পেশায় যারা জীবিকা নির্বাহ করত তারাও বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। 
কুড়িগ্রাম ইকো পার্কে পুতুলনাচ দেখতে এক দর্শক বলেন, খুব ভালো লাগছে। কারণ পুতুলনাচ আমাদের  ঐতিহ্যের অংশ। এটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এ জন্য খুব দুঃখ লাগে। আমরা ছোটবেলায় বাবা মায়ের কাছে পুতুলনাচের গল্প শুনেছিলাম।  এটি যেন আর হারিয়ে না যায়।  বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে বেঁচে থাকে।  এটিই তাদের কামনা। পুতুলনাচের কারিগর আলতাফ হোসেন ও রহিজল মিয়া জানান মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য এ ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ ধরে রাখলেও আকাশ সংস্কৃতির যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় অনেকটাই জীবিকা সংকটে পড়েছেন তারা। পুতুলনাচ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। তা না হলে আমাদের এ ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।  পুতুলনাচের গায়িকা আফরোজা খাতুন জানান, আমি ছোটবেলা থেকে নাটক ও গান বাজনা করি। এটি দিয়েই আমাদের পরিবারের জীবন চলে। দীর্ঘদিন থেকে আমি পুতুলনাচের সঙ্গে জড়িত। যখন নাচ হয় না তখন সংসারে কষ্ট হয়। পুতুলনাচ কোম্পানির মালিক বাবু মিয়া জানান, আমি ছোটবেলা থেকে সংগীত অঙ্গনে জড়িত। পেশায় একজন শিল্পী। এর ওপর আমার জীবন জীবিকা চলে। আমি যাত্রা করতাম। এক সময় সার্কাসে ছিলাম।

এই পুতুলনাচের দলটি ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। প্রথম দিকে বেশ ভালোই চলছিল। এখন বিলুপ্তির পথে।  এখন কোথাও ডাক পাই না। এটি দিয়ে শুধু আমার নয় আরও ৬/৭ জনের জীবন চলত। সরকার আমাদের নিয়ে কোনো চিন্তাই করে না। জেলা প্রশাসক যদি আমাদের স্থানীয় মেলায় ডাকত তাহলে অন্তত বেঁচে থাকতে পারতাম। 

প্যানেল

×