
.
সবচেয়ে দামি মাছ হিসেবে ইলিশের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। আর বৈশাখ হলে তো কথাই নেই! পান্তা ইলিশ উদ্যাপনে সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে দেশের এই জাতীয় মাছ। চড়া দামে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। যে ইলিশ আকার ও সাইজে যত বড় তার দর তত বেশি। রাজধানীর ঢাকার বাজারে রবিবার এক কেজি বা তার চেয়ে একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর সবচেয়ে বড় আকৃতির ইলিশ মাছ ৩০০০-৩৫০০ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরেই পহেলা বৈশাখে ইলিশের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ইলিশের চাহিদা রয়েছে। আর ক্রেতারা সাধ্যমতো বেশি দাম দিয়েই ইলিশ মাছ কিনছেন।
পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনেছেন স্বামীবাগের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিটি এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে তাকে ২ হাজার ৫০০ টাকা গুনতে হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে তিনি একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান করছেন জানিয়ে বলেন, আর এ জন্য ইলিশ কিনতে হয়েছে। ইলিশ মাছ ছাড়া পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন অপূর্ণ থেকে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছোট বেলায় তিনি গ্রামের বাড়িতে পান্তা ইলিশের কথা জানতেন না। তবে ঢাকায় এসে পহেলা বৈশাখের এই সংস্কৃতিতে তিনি অভ্যস্ত হয়েছেন। এখন মনে হয়, পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের যোগসূত্র রয়েছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন মাছ বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশ মাছের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারণ এই সময়ে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। তবে বাজারে ইলিশ মাছ রয়েছে। চাহিদা বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের ইলিশ ও দেশে মজুতকৃত ইলিশ এখন বাজারে আনছেন। ফলে দাম বেশি হলেও বাজারে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
ইলিশ কিনতে আসা অনেকেই হতাশার সুরে বলছেন, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশের দাম। চলতি সপ্তাহে ইলিশের চড়া দাম দেখে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে আমাদের দেশের মাছ। কিন্তু ইলিশের দামের এ অবস্থা কেন? গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদনও বাড়ছে ইলিশের। কিন্তু উচ্চ মূল্যের কারণে দেশের এই মাছটির স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। তবে ভোক্তারা এ জন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছে। তা না হলে ইলিশ মাছের এত দাম কেন হবে?
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এবার যেন জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ইলিশ খায় তাদের বুঝতে হবে ইলিশ আর জাটকা এক নয়। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। পহেলা বৈশাখে যারা পান্তা-ইলিশ খাবেন তারা মূলত জাটকা খাবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী বা সাগর থেকে ইলিশ আহরণের পর ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কয়েকটি হাত ঘোরে। এ সময়ই মাছটির দাম বেড়ে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করেও ইলিশের দাম বাড়িয়ে দেয়।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইলিশ পাচার হয় কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। বাংলাদেশ মৎস্য করপোরেশনের (বিএফডিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, মাস দুয়েক আগে সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি সাগর থেকে সরাসরি ইলিশ কিনে রাজধানীতে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিয়েছিল।
তখন কিন্তু অনেক কম দামের ভোক্তারা ইলিশ মাছ খেতে পেরেছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে কিনতে গেলে দাম হয় আকাশচুম্বী। তার মানে এখানে কারসাজি আছে। তিনি বলেন, এ কারসাজি ভাঙতে সরকারকে কাজ করতে হবে।