ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

মুছে যাক গ্লানি

আবু আফজাল সালেহ

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মুছে যাক গ্লানি

বাংলা-নববর্ষকেন্দ্রিক বৈশাখী মেলায় সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের আনাগোনা। এ সময় মৈত্রী-সম্প্রীতির এক উদার মিলনক্ষেত্র তৈরি হয়। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই আসে মেলায়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিকিকিনির আশা আর বিনোদনের টান। ঢাকা ও কলকাতার পাশাপাশি প্রবাস ও শহর-গ্রামে  তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা- উৎসবে মেতে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথের এ গানটি গেয়ে ওঠেন, ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক পুরাতন স্মৃতি,/যাক ভুলে যাওয়া গীতি, অশ্রুবা®প সুদূরে মিলাক।/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা...’। কৃষি ও রাজনৈতিক ভাবনা থেকেই বাংলা নববর্ষের প্রচলন। প্রকৃতির সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে ও কৃষি-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুশৃঙ্খলতা আনয়নের জন্য দিনপঞ্জি, সন ও তারিখের প্রণয়ন করা হয়। ফলশ্রুতিতে, তারপরে বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়। যা আজ অখণ্ড বাঙালির প্রেরণা ও শক্তির উৎস।
কবি দাউদ হায়দার ডয়েচ ভেলের ¯প্যানিশ বিভাগের এক সাংবাদিককে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে বাঙালির ‘কার্নিভাল’ বলে উল্লেখ করেন। বাঙালির এ কার্নিভালে অসাম্প্রদায়িক দিকটা ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ, ভারত ও প্রবাসী বাঙালির মধ্যে প্রাণ-সঞ্চারিত হয়। বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযুক্ত হয় পয়লা বৈশাখকে ঘিরে। সাহিত্যেও প্রভাব রয়েছে বোশেখের রুদ্ররূপ ও বিভিন্ন উঠসব নিয়ে। বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখ ঘিরে বাঙালি কবি ও সাহিত্যিকগণ সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে হালের কবি-সাহিত্যিকগণ বৈশাখ নিয়ে কবিতা-সাহিত্য রচনা করছেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় নজরুল বলেছেন ধ্বংস আর যুদ্ধ থেকেই নতুনের সৃষ্টি হয়! তেমনই বাংলা নববর্ষের কালবৈশাখী ঝড় বা রুদ্ররূপ থেকেই অনুপ্রেরণা পায় বাঙালি। ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!/আসছে নবীন জীবন-হারা অসুন্দরে করতে ছেদন।/তাই সে এমন কেশে বেশে/প্রলয় বয়েও আসছে হেসে/মধুর হেসে।/ভেঙ্গেও আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর।/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/এ ভাঙ্গা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?/তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’-(প্রলয়োল্লাস)
স্বাধীনতার প্রথম মাসেই এসেছিল পয়লা বৈশাখ- বাংলা নববর্ষ। কবি  সমুদ্র গুপ্তের  ‘বৈশাখ: একাত্তরে’  কবিতায় স্মৃতিচরণ পাই; মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও ব্যঞ্জনা, যুদ্ধাবস্থার কথা পাই- ‘যুদ্ধের প্রথম মাসে এসেছিল পয়লা বৈশাখ/মেঘের ডম্বরু ফেলে হাতে হাতে উঠেছিল/স্বাধীনতাযুদ্ধের বজ্রনিনাদ/যুদ্ধমুখী পা আর স্বাধীনতা দেখে-ফেলা চোখ/আমাদের জেগে ওঠার প্রথম সাক্ষী ছিল বৈশাখী মেঘ।’-(সংক্ষেপিত)
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাভাষী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগোষ্ঠীর একমাত্র সার্বজনীন উৎসব ‘বাংলা নববর্ষ’। বাঙালির এই উৎসব অসাধারণ বৈশিষ্ট্যময়। বাংলা নববর্ষের  এ ঐতিহ্য মাটি ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দিনে দিনে পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ-উৎসব। ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে বাংলা ভূখণ্ডের সব মানুষের প্রাণের উৎসব ‘পয়লা বৈশাখ’ ঘিরেই। বৈশাখকেন্দ্রিক উৎসবকে ঘিরে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ অপরাজেয় শক্তি হয়ে উঠেছে। বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার নাম বা দিশারি হয়ে উঠেছে পয়লা বৈশাখ ও এ উৎসব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা।

×