
ছবি: সংগৃহীত
জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কিন্তু মনোবলে অদম্য—এমনই এক উদাহরণ হাফেজ বিল্লাল হোসেন। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচরা ইউনিয়নের এই তরুণ শুরু থেকেই অন্যের করুণার উপর নির্ভর না করে নিজেই গড়ে তুলেছেন নিজের কর্মজীবন। তিনি শুধু একজন কোরআনের হাফেজই নন, একজন আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তাও।
বিল্লাল হোসেন স্থানীয় এম.কে.এম. হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় কোথাও চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাননি। তবে হতাশ না হয়ে, প্রতিবন্ধী ভাতা ও ধার করা কিছু অর্থ দিয়ে শুরু করেন ছোট্ট একটি দোকান—‘আল-আকসা সততা সুন্নাতি স্টোর’।
দোকানটি এখন তার জীবনের অন্যতম আশ্রয়। অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি পণ্যের ধরন বুঝতে পারেন, চলাফেরা করেন সাহায্য ছাড়াই। এই দোকানই তার আত্মবিশ্বাস ও জীবন সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিল্লাল হোসেন বলেন, "আমি জন্ম থেকে অন্ধ। মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি। এখন লেখাপড়া শেষ, জীবনে কিছু করতে হবে। আমি চাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে, সমাজের জন্য কিছু করতে। সেই চিন্তা থেকেই দোকান দিয়েছি। প্রিয় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই—আমি যেন সফল ব্যবসায়ী হতে পারি। যদি সরকার আমাকে সাহায্য করে, তাহলে আমি আরও বড় করে ব্যবসা চালাতে চাই এবং সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।"
বিল্লালের এমন উদ্যোগে গর্বিত তার এলাকাবাসী। অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যেখানে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন, সেখানে বিল্লাল নিজেই হয়েছেন স্বনির্ভর। এলাকাবাসীর আশা—সরকার যদি তাকে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়, তবে তিনি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারবেন।
ফুলকোচরা বাজারের এক বাসিন্দা বলেন, "বিল্লাল ভাই একজন দৃষ্টান্ত। তিনি নিজে অন্ধ হয়েও সততা ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা চাই, উনার মতো আরও অনেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক।"
মেলান্দহ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. আলমগীর বলেন, "বিল্লাল হোসেন এখনো আমাদের কাছে কোনো সহায়তার আবেদন করেননি। তিনি আবেদন করলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিল্লাল চান না করুণা। তিনি চান সরকারি সহায়তা পেয়ে তার ছোট ব্যবসাটিকে বড় করতে, এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে।
আবীর