
গাঢ় সবুজ পাতার ছোট ছোট সারিবদ্ধ গাছ। ঠিক তার নিচে ঝুলছে একগুচ্ছ কমলা রঙের ফল। প্রতিটি ফলের ওজন ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। আকারে যেমন বড়, তেমনি পুষ্টিগুণেও অনন্য। মাত্র তিন মাসেই প্রতি হেক্টরে ৪০-৫০ টন ফলন দিতে সক্ষম। বার্গার তৈরিতেও এটি অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এই ফলের মাত্র একটি স্লাইস’ই পুরো বার্গারের জন্য যথেষ্ট। নতুন উদ্ভাবিত এই ফলের জাত বর্ণনা করতে গিয়ে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই জাতের নাম ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’। সাধারণত টমেটো দুই কোষবিশিষ্ট হলেও নতুন এই জাতের টমেটোতে অনেকগুলো কোষ বিন্যাস রয়েছে। এছাড়াও, কোষ বিন্যাসটি দেখতে অনেকটা গরুর মাংসের মতো হওয়ায় এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাউ বিফস্টেক’।
এই জাত উদ্ভাবনে প্রধান গবেষক হিসাবে ছিলেন বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান। গবেষণা কাজটি ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় এবং সংকরায়ন ও বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। চার বছর জাতটি নিয়ে কাজ করার পর ২০২২ সালে অধিকতর কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. আরিফ হাসান খান রবিন ও অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান গবেষণার তত্ত্বাবধান করেন। এছাড়া, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেশকুল জান্নাত তাজ তার স্নাতকোত্তর গবেষণার অংশ হিসেবে এই জাতটি নিয়ে দীর্ঘ তিন বছর কাজ করেন।
অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান , ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১ গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১২০ সেমি এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম থোকা ধরে। তবে, প্রতিটি ফল আকারে বড় হওয়ায় গড়ে ৩-৪টি টমেটোতেই ১ কেজি ওজন হয়ে যায়। একটি গাছে সাধারণত ১৫ থেকে ২০টি টমেটো ধরে। ফলে প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৫-৬ কেজি টমেটো উৎপাদিত হয়, যা সাধারণ টমেটো গাছের তুলনায় বেশি। জাতটি হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ টন ফলন দিতে সক্ষম এবং ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি আরো জানান, এই টমেটোতে উচ্চ পরিমাণে গ্লুকোজ (১.২%), ফ্রুকটোজ (৩.৭%) ও সুক্রোজ (৩.৬%) থাকায় এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাদেও মিষ্টতা যুক্ত। এসব বৈশিষ্ট্য এই টমেটোকে ভোক্তাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
এই জাতটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, বাউ বিফস্টেক টমেটো-১ কম বীজযুক্ত, মাংসল ও উজ্জ্বল লাল রংয়ের হয়ে থাকে। এটি কোনো ধরনের সংরক্ষণ উপায় ছাড়াই সাধারণ তাপমাত্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সংরক্ষণ করা যায়। পোকা মাকড় ও রোগ বালাই হয় না বললেই চলে। ফলে ক্ষতিকর কীটনাশকের তেমন কোন প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন খরচ কম হয়। উৎপাদন কৌশল অন্যান্য জাতের তুলনায় অধিকতর পরিবেশবান্ধব। এছাড়া, এর পুষ্টি উপাদানের কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। এই জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির জন্য বেশ উপযোগী এবং এটি স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।