
ছবি: প্রতীকী
আমরা কি কখনও ভেবেছি, যদি একটা ওয়ান-ওয়ে টিকিট কেটে মঙ্গলগ্রহে পাড়ি দেওয়া যেত — আর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাও না থাকত?
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এমন কিছু রাশির মানুষ আছেন, যারা পৃথিবীর কোলাহল ছেড়ে মঙ্গলের মতো নির্জন, নিরাবরণ পরিবেশেও দিব্যি মানিয়ে নিতে পারেন। না আছে পাশের বাড়ির শব্দ, না আছে প্রিয় ফাস্ট ফুড, না আছে ইউটিউবের বিড়ালের ভিডিও — আছে শুধু ধূলিধুসর লাল ভূমি, অনন্ত নীরবতা, আর এক নতুন পৃথিবী গড়ার সুযোগ।
জ্যোতিষশাস্ত্র ও মানব মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট রাশির মানুষেরা এমন পরিবেশে সবচেয়ে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। তারা শুধু টিকে থাকাই নয়, বরং উপভোগ করতে পারে সেই একাকিত্ব ও চ্যালেঞ্জকে।
নিচে তুলে ধরা হলো এমনই চারটি রাশি, যারা একা থাকলেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে মঙ্গলগ্রহে — আর সেটা হতে পারে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ।
মেষ (Aries)
মেষ রাশির মানুষেরা সবসময় নতুন কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভালোবাসে।
যেখানে অনেকেই মঙ্গলের ধূলিময় মরুভূমিকে দেখে একঘেয়ে, মেষ সেখানে দেখে এক ফাঁকা ক্যানভাস — যেটিকে জয় করতে হবে। মজার ব্যাপার হলো, মঙ্গল গ্রহই মেষ রাশির অধিপতি — ফলে তাদের সম্পর্ক যেন একেবারেই প্রাকৃতিক।
রোমাঞ্চপ্রিয় এই রাশি পৃথিবীতেও বিপদকে পাত্তা না দিয়ে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পড়ে। সুতরাং, এক বছর মঙ্গলে কাটানো তাদের কাছে বড় কোনো বিষয় নয়। বরং, তারা নিজের মতো করে জিম বানাবে, গ্রীনহাউস তৈরি করবে, কিংবা মার্শিয়ান পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করবে।
প্রতিটি ছোট অর্জন — ভেঙে যাওয়া রোভার সারানো, কফি বানানো, কিংবা গাছ গজানো — তাদের এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেবে।
কুম্ভ (Aquarius)
কুম্ভ রাশির মানুষরা সবসময় ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
তারা একা থাকতে পছন্দ করে, কারণ তখন তারা তাদের আইডিয়া আর উদ্ভাবনে মন দিতে পারে। মঙ্গল তাদের জন্য এক আদর্শ নির্জনতা। সেখানে বসেই তারা হয়তো তৈরি করবে এমন এক প্রযুক্তি, যা পৃথিবীর মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।
চিন্তাভাবনায় ব্যতিক্রম এই রাশি হয়তো মহাজাগতিক বিকিরণ ব্যবহার করে যোগাযোগের নতুন উপায় আবিষ্কার করবে, কিংবা স্যাটেলাইট দিয়ে তৈরি করবে নতুন এক ধরনের ইন্টারনেট।
রাতের আকাশে পৃথিবীকে দূর থেকে দেখে তারা ভাববে — মানবজাতি কীভাবে গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আর হ্যাঁ, কুম্ভরা কিন্তু একটু গর্বও করে — “আমি মঙ্গলে কলোনি বানালাম, তুমি গত বছর কী করেছিলে?”
বৃশ্চিক (Scorpio)
বৃশ্চিক রাশির মানুষেরা একা থাকলে হয় ভেঙে পড়ে — অথবা হয়ে ওঠে চূড়ান্ত সারভাইভার। আর বাস্তবে, তারা বেশিরভাগ সময়ই সারভাইভার।
এই রাশির মানুষদের মাঝে অজানাকে জানার প্রবল আকর্ষণ থাকে। মঙ্গলে তারা হয়তো ঘুরে বেড়াবে গুহা, খুঁজবে জল, কিংবা অনুসন্ধান করবে প্রাচীন প্রাণের সম্ভাব্য চিহ্ন।
একা থাকলেও তারা নিজেকে বিশ্লেষণ করতে জানে — হয়তো ডায়েরি লিখবে, অতীতের স্মৃতি খুঁড়ে দেখবে, কিংবা নিজের ভেতরের আবেগের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিবে।
তাদের কাছে মঙ্গল যেন এক আদর্শ থিয়েটার — যেখানে নিজের চরিত্র পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা যায়, দূরে থেকে পৃথিবীকে দেখার এক অনন্য সুযোগ।
মকর (Capricorn)
মকর রাশির মানুষেরা বাস্তববাদী, সংগঠিত, আর সব কিছুতেই থাকে একটি পরিকল্পনা।
এক বছর মঙ্গলগ্রহে একা থাকা তাদের কাছে যেন এক বিশাল প্রজেক্ট। তারা সূচিপত্র তৈরি করে ফেলবে — কোন সময়ে কী কাজ হবে, কীভাবে রিসোর্স ম্যানেজ করতে হবে, আর কীভাবে হ্যাবিট্যাট গড়তে হবে।
প্রতিদিনের রুটিন থাকবে নিখুঁত — কখন বাতাস সরবরাহ পরীক্ষা করতে হবে, কখন সোলার প্যানেল পরিষ্কার করতে হবে, কবে গ্রীনহাউসে পানি দিতে হবে।
তাদের কাছে প্রতিটি ছোট সাফল্য — ক’টা আলু গজালো, কত কিলোওয়াট পাওয়ার এসেছে — একেকটি মাইলফলক।
হ্যাঁ, একাকিত্ব কিছুটা কষ্টের হলেও তারা সেটাকেও পরিণত করবে এক আত্ম-উন্নয়নের মিশনে। হয়তো ভবিষ্যতের বসবাসযোগ্য কলোনির নকশা তৈরি করবে, বা মঙ্গলের ধুলা দিয়ে নির্মাণসামগ্রী তৈরির পথ বের করবে।
মঙ্গলগ্রহে একা থাকা অনেকের কাছেই সাই-ফাই সিনেমার কল্পনা কিংবা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে পারে।
কিন্তু মেষ, কুম্ভ, বৃশ্চিক ও মকর — এই চারটি রাশির মানুষ একে শুধু সহ্যই করতে পারে না, বরং উপভোগ করতে পারে নিঃসঙ্গতা, চ্যালেঞ্জ, আর নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের সুযোগ।
মেষ শুরু করে, বৃশ্চিক গভীরে যায়, কুম্ভ উদ্ভাবন আনে আর মকর তা বাস্তবে রূপ দেয় — এই চারজন মিলে যেন গড়ে তুলতে পারে আদর্শ এক মঙ্গল কলোনি।
শেষ কথা — কখনও কখনও নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়, হলো নিজেকেই একেবারে অন্য এক গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া।
এম.কে.