ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

এসো মিলি প্রাণের উৎসবে

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২১:১৯, ৬ এপ্রিল ২০২৫

এসো মিলি প্রাণের উৎসবে

বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আইলো আইলো আইলো রে
রঙে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে...’

আর এক সপ্তাহ পরই শুরু হচ্ছে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। মাত্রই শেষ হলো আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তার পরপরই আসছে বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন একটি উৎসব। বাংলা নববর্ষেও কেনাকাটা ও সাজগোজে মেতে উঠেন সবাই। রান্না, বেড়ানো, নিজের সাজ, ঘরের সাজ নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। শপিংমল আর বুটিক শপগুলোতে নববর্ষের সাজ-পোশাকে ভরপুর হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর মেলা। বৈশাখের রং লাল-সাদা হলেও এখন বিভিন্ন রঙের মিশেল হয়েছে। 
খাবার: বৈশাখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পান্তা-ইলিশ। সঙ্গে হরেকরকম ভর্তা। ইলিশের দাম এ সময় আকাশছোঁয়া। তাই বলে কি বৈশাখ পালন হবে না! পান্তার সঙ্গে পেঁয়াজ-কাঁচামরিচের সখ্যতাও কম নয়। সঙ্গে রাখুন ঘরে তৈরি নানা রকম ভর্তা। রাখতে পারেন খুদের ভাত বা খিচুড়ি, সঙ্গে বেগুন ভাজা। আজকাল নতুন ট্রেন্ড হয়েছে মাটির হাঁড়িতে খাবার পরিবেশন। যা-ই রান্না করেন না কেন, মাটির পাত্রে আপ্যায়ন করলে সেখানে বৈশাখী আবহ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সামর্থ্য থাকলে কিনতে পারেন মাটির ডিনার সেট।
বৈশাখী সাজে নারী ও শিশু: খুব ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ভোরেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে বেরিয়ে পড়ে বৈশাখ উদযাপনে। তবে এই গরমে শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি, ফতুয়া যা-ই পরেন না কেন চেষ্টা করবেন সুতি, লিলেন, ভয়েল জাতীয় কাপড়ের পোশাক পরতে। বেছে নিতে পারেন কাঠ, কাপড়, সুতার চুড়ি-গয়না।

শাড়ি পরব আর চুলে ফুল দিব না, তাই কি হয়! সব মার্কেটেই এখন কাপড়, শোলা, কাগজসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গয়না পাওয়া যায়। আপনার পছন্দমতো ফুলের গয়না কিনে নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন। তবে কাঁচা ফুলের সৌন্দর্য একদম আলাদা। সেদিন প্রতিটা জায়গায়ই পাওয়া যাবে বিভিন্ন রকম কাঁচা ফুল। তবে দাম পড়বে প্রায় দ্বিগুণ। বছরের এই একটা দিনই তো। সাজুন না মন ভরে। খোঁপা, বেণী বা এলোচুল- একটুখানি ফুলের ছোঁয়ায় হয়ে যাবে অপরূপ।

সেদিন খুব সকালে পার্লারও খোলা থাকবে। চাইলে এলাকারই পার্লার থেকে সেজে শাড়ি পরে নিতে পারবেন। শিশুদেরও লাল-সাদা সুতির শাড়ি, সালোয়ার-কামিজে সাজিয়ে মাথায় ফুলের ব্যান্ড লাগিয়ে দিতে পারেন।
বৈশাখী সাজে পুরুষ: ছেলেরা এই দিন লাল, সাদা পাঞ্জাবি পরে থাকেন। বিভিন্ন বুটিক শপগুলো বৈশাখের বিভিন্ন নকশা এঁকে পাঞ্জাবিও তৈরি করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে শার্ট, ফতুয়া, কতুয়া। শুধু বুটিক শপ নয়, এসব পোশাক পাবেন সব মার্কেটেও। জায়গা, কোয়ালিটি ও নকশাভেদে দামও ভিন্ন হয়ে থাকে।
ঘরের সাজ: আপনার ঘরটিও সাজিয়ে নিতে পারেন বৈশাখী সাজে। আজকাল মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা অনেক। নিজ হাতে কিছু করার আনন্দই আলাদা। রোজায় অনেকেই দই বা হালিম খেয়েছেন। সেই দই ও হালিমের পাত্রগুলো তো ঘরের কোণে ফেলেই রেখেছেন। দোকান থেকে কয়েক রকম রঙের কৌটা কিনে নিজেই রাঙিয়ে নিন পাত্রগুলো।

ঘরের কোণে বা দেওয়ালে ওয়াল হ্যাঙ্গিঙে টানিয়ে দিতে পারেন। অথবা চাইলে তাতে কিছু ইনডোর প্ল্যান্টও রাখতে পারেন। ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতলও রাঙিয়ে নিয়ে তাতে পানি দিয়ে ফুল বা মানি প্ল্যান্ট দিয়ে ঘরে রাখতে পারেন। নকশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন ফুল-লতা অথবা ঢোল-তবলা-একতারা। তাতে বৈশাখী একটা আবহ তৈরি হবে। অথবা সামর্থ্য মতো কিনে নিতে পারেন মাটি, কাঠ, বাঁশ, বেত, পাট, শোলা, পিতল বা টিনের বিভিন্ন ঘর সাজানোর সামগ্রী।
কোথায় পাবেন এসব সাজের সরঞ্জাম: প্রায় সব মার্কেটেই এখন এসব জিনিস পাওয়া যায়। মাটি, কাঠ, বাঁশ, বেত, তাল পাতার খোল ইত্যাদি যে কোনোটায় তৈরি পছন্দ মতো জিনিস দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার প্রিয় গৃহকোণ। আজকাল অনলাইনেও এসব জিনিস পাওয়া যায়। এ ছাড়া রঙ বাংলাদেশ, বিশ^রঙ, আড়ং, কে ক্রাফট, অঞ্জনসসহ বিভিন্ন বুটিক শপগুলোতেও পাবেন। তবে জায়গাভেদে দামও ভিন্ন হবে। এ ছাড়া দোয়েল চত্বর বা শিশু একাডেমির সামনে তো বিশাল খোলা মার্কেট রয়েছেই। 
সাধ্যের মধ্যেই সামান্য কিছু কিনে সাজিয়ে নিন আপনার গৃহকোণ। সবচেয়ে ভালো হয় ফেলে রাখা জিনিসগুলো দিয়ে নিজেই যদি তৈরি করে নিতে পারেন। তাতে উৎসব আর তৃপ্তি- দুটোই পাবেন।
 

×