
ঈদ উৎসবে দর্শনার্থীদের মন রাঙাতে প্রস্তুত শ্যামলীর শিশুমেলা
ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে সময়। শেষ হতে চলেছে সংযমের মাস মাহে রমজান। সেই সুবাদে হয়তো এই পত্রিকা পাঠকের হাতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পরই আকাশে ভেসে উঠবে এক ফালি চাঁদ। আলোকিত ওই চাঁদ জানান দেবে খুশির বারতা। চাঁদরাতের পরদিনই হাজির হবে মুসলিমদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে সকলেই শামিল হয় একে অপরের উৎসবে।
তাই মুসলমানদের সমান্তরালে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ মেতে উঠবে এ উৎসবে। বয়ে যাবে আনন্দের বন্যা। সেই সূত্রে বলা যায়, ঈদের ছুটির সময়টা সাধ্যমতো উপভোগ করে রাজধানীবাসী। রঙিন মন নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে রাজপথে। চষে বেড়ায় শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। ঈদের প্রথম দিনের দুপুর গড়ানো বিকেল থেকেই শুরু হয় মূলত ঘোরাঘুরির পালা।
রমনা পার্কসহ বিভিন্ন উদ্যানের সবুজ-শ্যামল আঙিনা কিংবা নয়ন জুড়ানো হাতিরঝিলের পাশাপাশি শহরের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী বিনোদন কেন্দ্রগুলো হয়ে ওঠে সরগরম। বেড়ে যায় রঙিন মনের উদ্যাপনকারীদের পদচারণা। ফলে প্রবল চাপ পড়ে বিনোদন কেন্দ্রসমূহে। তাই এবারের ঈদের লম্বা ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রঙের প্রলেপে সেজেছে নবরূপে এসব কেন্দ্র। একইভাবে বিভিন্ন রাইডের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো মেরামত করে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে নগরবাসীর হৃদয় রাঙাতে পুরোদমে প্রস্তুত বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
ঢাকাবাসীর পছন্দের বিনোদন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, শ্যামলীর শিশু মেলা, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিল, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, উত্তরার দিয়াবাড়ী, সংসদ ভবন এলাকার জিয়া উদ্যান, শ্যামপুরের বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক, শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর, শ্যামলীর শিশু মেলা, সাভারেরর ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, হাতিরঝিল ও ৩০০ ফুট সংলগ্ন পূর্বাচল বাজার ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মজাদার খাবার খেয়ে কিংবা বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ছবি দেখে সুসময় কাটবে উৎসব উদ্যাপনকারীদের।
জাতীয় চিড়িয়াখানা : বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষকে কাছে টানে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। ৫০ টাকার টিকিট কেটে এখানে প্রবেশের পর দেখা মিলবে ১৩৬ প্রজাতির তিন হাজার ৩০০ পশুপাখি। স্বভাবতই ঈদের ছুটিতে এই পশু-পাখির প্রদর্শনালয়ে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। প্রাণীরাজ্যে প্রবেশে রীতিমতো লম্বা লাইন পড়ে যায়।
প্রবেশপথে প্রচ- ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এমন বাস্তবতায় এবার চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জনকণ্ঠকে জানান, প্রতিদিনের মতোই ঈদে চিড়িয়াখানা সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এবার ২৯টি পয়েন্ট থেকে টিকিটি বিক্রি করা হবে।
ভেতরে প্রবেশের জন্য থাকছে ১৬টি প্রবেশদ্বার। এমনকি গাড়ি পার্কিংয়ের টিকিটের জন্য পৃথক বুথ হবে। এ ছাড়া সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু হওয়া যানজট এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ইতোমধ্যে ভেতরের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। রং করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় সিসি ক্যামেরাগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবেন, সেই সংক্রান্ত নির্দেশনা বোর্ড বসানো হয়েছে।
ভেতরে খাবারের বিষয়টি সামাল দিতে পর্যটন করপোরেশনের দু’টি রেস্তোরাঁর সঙ্গে এবার আরেকটি অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র বসানো হবে। একইভাবে দুটি পৃথক স্থানে পানির ব্যবস্থা থাকবে। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের সা”চ্ছন্দ্যে চলাফেরা ও নিরাপত্তা রক্ষায় চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটির দিনগুলোয় কর্মচারীদের কোনো ছুটি থাকবে না। তারা রোস্টার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন।
শিশু মেলা : ঈদ উৎসবে সোনামণিদের জন্য যেন এক তীর্থকেন্দ্র হয়ে ওঠে শ্যামলীর শিশুমেলা। এখানকার মজার মজার রাইডে চড়ে কেটে যায় ছোট্ট বন্ধুদের দুরন্ত সময়। শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিশুদের সমাগম ঘটে শিশু মেলায়। এখানে রয়েছে রয়েছে বাম্পার কার, কার রাইড, ড্রাগন রোলার, নাগরদোলাসহ ৪০টির মতো রাইড। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনাধীন এই কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। অন্য সময়ের মতোই ঈদ উৎসবে সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশু মেলা।
লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিল : উৎসব উদ্যাপনে অনেকেই ছুটে যায় পুরান ঢাকার দুই ঐতিহাসিক স্থাপনা লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিলে। এই ভূখ-ের পেছনের ইতিহাসের কথা জানান দেয় মুঘল আমলে নির্মিত দুর্গ লালবাগ কেল্লা। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অলংকৃত দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনায় রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, পরীবিবির সমাধি এবং শাহী মসজিদ। প্রবেশ মূল্য দশ টাকা। খোলা থাকবে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী ইসলামপুরে ১৫০ বছরের পুরনো প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল জাদঘুর। ঈদে ঢাকার নবাবদের এই আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাছারি দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, সাধারণ সময়ে প্রতিদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা ১৫০ থেকে ৩০০ হলেও ঈদের ছুটিতে সেটি বেড়ে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার।
ফ্যান্টাসি কিংডম : ঈদ উৎসবে উদ্যাপনকারীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে ওঠে সাভারের থিমপার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল দশটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ফ্যান্টাসি কিংডম। এখানে রোলার কোস্টার, ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব সøাইড, ওয়াটারপুলসহ নানা মজার রাইডে চড়ে উপভোগ্য সময় কাটাতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
এখানে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৪০০ টাকা এবং বাচ্চাদের জন্য৩০০ টাকা। ৮ ধরনের রাইডসহ প্যাকেজ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৮০০ টাকা এবং বাচ্চাদের জন্য ৬০০ টাকা। এদিকে ফ্যান্টাসি কিংডমের অন্তর্ভুক্ত ওয়াটার কিংডমে প্রবেশ টিকেটসহ সকল রাইডের প্যাকেজ মূল্য ৮০০ টাকা।