ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২৮ মার্চ ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ঈদ উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর একটি মার্কেটে বর্ণিল আলোকসজ্জা

শহর ঢাকায় বাস করে কোটি মানুষ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কয়জন এই নগরের শিল্পিত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করেছেন? কিংবা নিজ স্বার্থের বাইরে রাজধানীর শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন? উত্তরে বলা যায়,  এই সংখ্যাটা খুবই স্বল্প। সেই স্বল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে পথিকৃৎ এক ব্যক্তিত্ব  হচ্ছেন সন্্জীদা খাতুন। তিনি এই শহরসহ দেশজুড়ে সংস্কৃতির ¯্রােতধারা ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন আমৃত্যু। গত শতকের ষাটের দশক থেকেই সেই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেন।

পাকিস্তান আমলে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান। উদ্যাপন করেছেন কবিগুরুর জন্মশতবর্ষ। মানবিক মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ঐতিহ্যবাহী সংগীত প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সংস্কৃতির আশ্রয়ে স্বাধিকারের কথা বলা এই মানুষটিসহ কয়েকজনের উদ্যোগে গ্রাম বাংলায় নববর্ষ পালনের রীতি পৌঁছে গেছে শহর ঢাকায়। সেই ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল  ছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে রমনা বটমূলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজন।

এভাবেই তিনি নগর জীবনে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন গ্রাম বাংলার নববর্ষকে। গত মঙ্গলবার অদেখার ভুবনে পাড়ি জমিয়েছেন এই সংস্কৃতি সংগ্রামী। এই মৃত্যুতে সমাপ্তি ঘটেছে একটি অধ্যায়ের। তাই সপ্তাহজুড়ে নানা ঘটনার মধ্যে তার প্রয়াণে শোকের সাগরে ভেসেছে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমী থেকে  মুক্তচিন্তার মানুষরা। বেদনার্ত হৃদয়ে চোখের জলে, ফুলেল শ্রদ্ধা ও গানের সুরে বুধবার তাকে বিদায়ী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অগণন মানুষ। তবে আমৃত্যু দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করলেও সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে কোনো রাষ্ট্রীয় শোক প্রকাশ না করায় বিস্মিত ও আশাহত হয়েছেন সংস্কৃতিকর্মী থেকে রাজনীতিবিদরা।

ছায়ানট থেকে  শহীদ মিনারের শ্রদ্ধাঞ্জলি  পর্বে শামিল হয়ে তারা বলেছেন, সন্জীদা খাতুনের মতো মানুষকে গ্রহণ করতে না পারা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে  শোক  প্রকাশ না করাটা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। কারণ, এ দেশের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক  আন্দোলনে রয়েছে তার ভূমিকা। মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেছেন। সংস্কৃতির আশ্রয়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন মানবিক জীবন দর্শন। প্রাপ্তির পরিবর্তে বরং নিজেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই রাষ্ট্র তাকে মনে না রাখলেও বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। 
উৎসবকেন্দ্রিক কর্মচাঞ্চল্য ॥ এবার বলি, আসন্ন ঈদুল ফিতরের কথা। মুসলিমদের  সর্বোচ্চ এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এখন দারুণ সরব শহর ঢাকা। সব ঝক্কি-ঝামেলা ছাপিয়ে শহরজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি দৃশ্যমান হচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য। চলছে নগরবাসীর শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। চোখে পড়ছে ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিং মল, সুপার মার্কেট কিংবা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে উৎসব রাঙিয়ে তোলার অপেক্ষমাণদের পদচারণা।

যার যার সাধ্য অনুযায়ী খরিদ করছেন পোশাক থেকে জুতা কিংবা নিজেকে মোহনীয় করে সাজিয়ে তোলা গহনা, বিছানার চাদরসহ রকমারি গৃহসজ্জার পণ্য। আর এমন বাস্তবতায় ক্রেতাকে  কাছে টানতে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দৃশ্যমান হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। ফলে রাতের ঢাকা হয়ে উঠছে বড্ড  বেশি রঙিন। মার্কেটের অঙ্গসজ্জার সেই বিবেচনায় পৃথকভাবে উঠে আসে পলওয়েল সুপার মার্কেটের কথা। নয়া পল্টনের এই মার্কেটটির সামনের আঙিনা বড় পরিসরজুড়ে ছড়িয়েছে লাল-সবুজের আলো।

রাত্রিকালের সেই আলোকছটা অবচেতনেই  স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলাদেশের পতাকার রংটি। মাঝের এই দুই রঙের চারপাশে দেখা ঘিরে রয়েছে তারকাসদৃশ হলদে ও কমলা রঙের আলোকছটা। এই বর্ণিল আলোকপ্রভার বিকিরণে  মার্কেটের সামনের সড়কটির ঝলমলে রূপটিও নজর কাড়ে সকলের।
চলছে নববর্ষের প্রস্তুতি ॥ আর ক’দিন পরেই বিদায় নেবে বঙ্গাব্দ ১৪৩১। হাজির  হবে নতুন বাংলা সন ১৪৩২। এক উৎসবের রেশ ধরে এগিয়ে আসছে আরেক উৎসব। সেই সূত্রে চলছে বাংলা নববর্ষের প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার বসন্ত দুপুরে বর্ষবরণের  প্রস্তুতি পর্বের শিল্পিত তৎপরতা চোখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। প্রবেশপথের পাশেই বিছিয়ে রাখা হয়েছে  লম্বাকায় এক টেবিল।

সেই টেবিলে ক্যানভাস বিছিয়ে ছবি আঁকছিলেন চারুশিক্ষার্থীরা। গ্রাম বাংলার রূপময়তা, নগর জীবনের দৃশ্যকল্পসহ নানা বিষয় মূর্ত হয়েছে সেসব ক্যানভাসে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে শিক্ষকদের চিত্রিত চিত্রকর্ম। এসব ছবি বিক্রি করে পয়লা বৈশাখ রাজপথে বেরুনো মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যয়ভার মেটানো হবে। এদিকে অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে চলছিল, তুহিন পাখি, রাজা-রানীর মুখোশসহ শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ। লিচুতলায় দেখা মেলে কাঠ-বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন শিল্প-কাঠামো নির্মাণের তৎপরতা।

কর্মরত চারু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার শোভাযাত্রার সামনে থাকবে চারটি বড় শিল্প-কাঠামো। এই চার ভাস্কর্যের মধ্যে থাকবে ইলিশ মাছ, কাঠের বাঘ, শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা বা দোয়েল পাখি এবং ফ্যাসিবাদের প্রতিচ্ছবিময় একটি কাঠামো। 
চারুকলার মতোই বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। এখানে চলছে রমনা বটমূলের প্রভাতী আয়োজনের প্রস্তুতি। এ বিষয়ে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা আহমদ লিসা জানান, গত চার মাস ধরে বর্ষবরণের আয়োজনকে সফল করার করার প্রস্তুতি চলছে। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার মহড়া হচ্ছে।

এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।’ অন্ধকার থেকে আলোর পথে ধাবিত হওয়ার প্রত্যয়ে নববর্ষের গান, কবিতা, পাঠসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নেবেন শতাধিক শিল্পী। গাওয়া হবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে পঞ্চকবির গান।

×