
ছবি: সংগৃহীত
৯০ বছর পার করা মানে শুধু দীর্ঘ জীবন নয়, বরং এক ধরনের একাকীত্বও বয়ে আনে। জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মতো গল্প থাকে প্রচুর, কিন্তু সেই গল্প শোনার মানুষ কমে যায়—বন্ধু, জীবনসঙ্গী ও প্রিয়জনদের বেশিরভাগই হারিয়ে যেতে থাকে। তবে আর্জেন্টিনার কিছু প্রবীণ মানুষ একাকীত্বকে জয় করতে বেছে নিয়েছেন এক নতুন পথ—পডকাস্ট।
২০২৩ সালে, ৯৭ বছর বয়সী আলবার্তো চ্যাব তাঁর নাতনির সহায়তায় অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তিনি তাঁর বয়সী মানুষদের একত্রিত হয়ে জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া পান তিনি—প্রায় ১৫০০ ইমেইল আসে লাতিন আমেরিকা ও কানাডার বিভিন্ন জায়গা থেকে।
এই উদ্যোগ নজরে আসে ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক গুয়াদালুপে কামুরাতির, যিনি মনে করেন, এই কথোপকথনকে ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে আসা উচিত। তারই ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় “নাইনটি অ্যান্ড কাউন্টিং” (Ninety and Counting) নামের পডকাস্ট, যেখানে প্রবীণরা তাদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, আবেগ এবং সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।
পরিবর্তনের গল্প ও হারিয়ে যাওয়া সময়ের কথা
প্রতি দুই সপ্তাহে একবার চ্যাব ও তাঁর সঙ্গীরা বসেন নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। চ্যাব বলেন, "যা কিছু মনে আসে, তাই বলো। কারণ আমাদের সবার জীবনে কখনো না কখনো একইরকম পরিস্থিতি আসে।"
পডকাস্টের একটি ভিডিওতে ৯৪ বছর বয়সী নেলিদা বলেন, “আমি খুবই খুশি, কারণ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করেছি—যারা এখনও জীবিত আছেন।” আরেকটি ক্লিপে ৮৫ বছর বয়সী এক নারী জানান, অবশেষে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন—ভ্রমণ করেছেন স্পেন ও ইংল্যান্ডে, যদিও আর্জেন্টিনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য তা কঠিন।
২০২৪ সালে শুরু হওয়া এই পডকাস্টের এখন দ্বিতীয় মৌসুম চলছে। নিয়মিত ১০ জন প্রবীণ—পাঁচজন পুরুষ, পাঁচজন নারী এবং চ্যাব—এই পডকাস্টে অংশ নেন। তারা এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন যা একসময় সাধারণ ছিল, কিন্তু এখন হয় বিলুপ্ত, নয়তো পরিবর্তিত। উদাহরণস্বরূপ, ছোটবেলায় খাওয়া মিষ্টির স্বাদ, বাজার থেকে কাঁচা দুধ কেনার পরিবর্তে প্যাকেটজাত দুধ পান করা, কিংবা উলের গদি বানানোর ঐতিহ্য।
এক নতুন যোগাযোগের সেতু
চ্যাব মনে করেন, এই পডকাস্ট অংশগ্রহণকারী ও শ্রোতাদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আগে বয়সের কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার বা সমাজের বাইরে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাঁদের গল্প বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “আগে নাতি-নাতনিরা শুধু বলত, ‘কেমন আছেন, দাদু? ভালো, খুব ভালো।’ তারপর মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাদের কাছে গল্প আছে, প্রশ্ন আছে। ফলে এক নতুন সামাজিক সংযোগ তৈরি হয়েছে।”
দীর্ঘ ও আনন্দময় জীবনযাপনের রহস্যও এই পডকাস্টের আলোচনার বিষয়। ৯২ বছর বয়সী মাবেল বলেন, “৯০ বছর বাঁচার একটি টিপস হলো—স্বাস্থ্যকর খাবার খাও এবং নিজেকে প্রচণ্ড ভালোবাসো।”
চ্যাবের জন্য এই পডকাস্টিং নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যদিও প্রযুক্তিগত দিকগুলো কামুরাতি সামলান, তবু চ্যাব নিজে এখন নতুন প্রযুক্তি, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়েও জানার চেষ্টা করছেন। তাঁর ভাষায়, “এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি।”
এভাবেই প্রবীণদের জন্য এক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যেখানে তারা শুধু কথা বলেন না—তারা নতুন করে জীবনকে আবিষ্কারও করেন।
সূত্র: https://edition.cnn.com/2025/03/25/americas/aging-loneliness-podcast-argentina-intl-latam/index.html
আবীর