
নববধূ- কথাটা শুনলেই চোখে ভাসে লাল টুকটুকে শাড়ির আঁচলে ঘোমটা টানা লাজুক হাসির কোনো মেয়ে। মাত্রই যার বিয়ে হয়ে স্বামীর সংসারে প্রবেশ করেছে। নতুন ঘর আর নতুন সব মানুষের সঙ্গে অচেনা পরিবেশ। ভীরু ভীরু পায়ে তার বাড়িময় পরিচিত হয়ে ওঠার চেষ্টা। এ বাড়ির নিয়ম আর মানুষগুলোকে আপন করে নেয়ার ইচ্ছা। এর মাঝেই চলে এলো ঈদ। বিয়ের আগে বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু আর আত্মীয়Ñপরিজন নিয়ে কত সুখস্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার! বারবার চোখ ছলছল করে উঠছে- আর ফিরে আসবে না সেই দিনগুলো। ইতোমধ্যে এখানেও কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ২/৩ বার স্বামী আর দেবর-ননদের সঙ্গে মার্কেটেও যাওয়া হয়েছে। বাবার আর শ্বশুর বাড়ির সবার জন্যই কেনাকাটা হয়েছে। সে এক অন্য রকম আনন্দ! তবু থেকে থেকে মন আনচান করে উঠছে ফেলে আসা মানুষগুলোর জন্য।
ঈদের দিন নতুন শাড়ি পড়ে ঘোমটা টেনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এখন কাজ করছে সে। নতুন বউয়ের প্রথম ঈদ, তাই সামান্য কিছু রান্নার দায়িত্ব পড়েছে তার। শ্বশুর বাড়ির সবাই তাকে পাশে থেকে সব রকম সহযোগিতা করছে। দুপুরে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছে। হাসিমুখে আপ্যায়ন করছে, ক্ষণে আবার বিকেলে বাবার বাড়ি যাবে ভেবে মনের মাঝে খুশির ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে!
আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি নববধূর একটি সাধারণ চিত্র এটি। তবে সব পরিবারে এই চিত্রটি দেখা যায় না। বাড়ির ১৮/২০ বছরের মেয়েটি যখনÑ কিছু পারে না ও ছোট মানুষ। ঠিক তার বিপরীত চিত্র থাকে সমবয়সী নতুন বউটির ক্ষেত্রে। বউ মানে সব পারতে হবে, সব সইতে হবে। ঈদের দিন নতুন বউ বাবার বাড়ি গেলে হবে না। তবে এই চিত্র এখন অনেক কমে এসেছে। মেয়েরা বিয়ের পর দুই বাড়ি সমানতালে সামলাচ্ছে। শ্বশুর বাড়িও অনেকটা শিথিল হয়ে এসেছে। একটা মেয়ে জন্ম থেকে এক রকম পরিবেশে বড় হয়ে যখন সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবারে আসে, তখন প্রয়োজন সেই বাড়ির সবার সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব। তাহলে সে সহজেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। আবার নতুন বউকেও মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। নতুন পরিবেশে এসেই যদি পুরনো অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা বা ইচ্ছে না থাকে, তাহলে সেখানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। আমরা যতই আধুনিক হই না কেন, মনে মনে ঘরের বউকে সেই চিরায়ত শাড়ি পড়ে ঘোমটা টানা বাংলার বধূকেই খুঁজি। তাই বিশেষ দিনে কিছু সময়ের জন্য একটু নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করলে বরং সবাই খুশি থাকবে।
অনেককে ঈদ করতে যেতে হয় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে কিছু আঞ্চলিক নিয়ম থাকে। অনেক সময় তা ভালো নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে মনে রাখুন আপনি মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য এখানে এসেছেন। তাই নিয়মগুলো মেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। আর শ^শুর বাড়ির সবাইকেও খেয়াল রাখতে হবে কোনো কিছু যেন বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়। কঠিন কাজগুলো মন থেকে করলে দেখবেন সহজ হয়ে যাবে, নিজের কাছেও ভালো লাগবে।