
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ১০ বছরের এক শিশু পিতার জীবন বাঁচাতে একাই লড়াই করে যাচ্ছে। হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে থাকা বাবার চিকিৎসার জন্য কেউ পাশে নেই, এমনকি মা-ও সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে গেছেন। টানা ৪৯ দিন ধরে শিশু সাইম একাই তার বাবার পাশে রয়েছে, চিকিৎসার খরচের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর আবেদন জানাচ্ছে।
সাইমের বাবা কুমিল্লার হোমনা থানার রঘুনাথপুর গ্রামের ট্রাক চালক নাসির এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সংকটময় মুহূর্তে পরিবারের অন্য কেউ পাশে নেই। অসুস্থ স্বামী ও সন্তানকে ফেলে মা চলে গেছেন, আত্মীয়স্বজনরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সাইমের কথায়, "আমার আব্বুরে দেখার কেউ নাই, আমার আম্মুও চইলা গেছে। আগে আব্বু দোকান থেকে ১০ টাকা আনতো, এখন এক টাকাও নাই। ডাক্তাররা বলতেছে, বাঁচবে না, না হয় অন্য হাসপাতালে নিয়া যান।"
নাসিরের বড় ভাই এবং আত্মীয়রা কেউই তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। তিন শতক জমির মালিকানা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, বড় ভাই দায়িত্ব নেবেন, কেউ বা বলছেন, ফুফুরা দেখবে। কিন্তু বাস্তবে কেউই হাসপাতালে এসে দায়িত্ব নিচ্ছেন না।
এই কঠিন সময়ে সাইমের পাশে দাঁড়িয়েছে এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির এক সদস্য জানান, "শিশুটি এতদিন ধরে বাবার পাশে রয়েছে, অথচ তার মৌলিক অধিকার কেউ দেখছে না। আমরা তার পাশে থাকবো, তার শিক্ষা ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবো।"
যে নাসিরের উপার্জনে এতদিন পরিবার চলেছে, সেই নাসিরই এখন হাসপাতালের বিছানায় নিরূপায়। স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু একমাত্র ছেলে সাইম এখনো বাবার হাত ছাড়েনি। শিশুটি বলছে, "আমার আব্বুরে যদি কেউ সাহায্য করতো, তাহলে আব্বু সুস্থ হইতো।"
এখন প্রশ্ন, সমাজ কি এ শিশুটির লড়াইয়ে তার পাশে দাঁড়াবে? নাকি সাইমকে একাই বাবাকে হারানোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে?
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/C4NLlauIfgc?si=bo1FycNPZ2hn8eHX
এম.কে.