ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ

​​​​​​​জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২২ মার্চ ২০২৫

নেতানিয়াহুর পদত্যাগ  দাবিতে ইসরাইলে  ব্যাপক বিক্ষোভ

.

৭২ ঘণ্টায় গাজাকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে দখলদার ইসরাইল। গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলের বিমান স্থল হামলায় প্রাণ গেছে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনির। নিহতদের মধ্যে দুই ওপর শিশু রয়েছে। এর পরও হামলা থেমে নেই। এরই মধ্যে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখতে ইসরাইল সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই সপ্তাহে গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী আইডিএফের সামরিক তৎপরতা পুনরায় চালু করার বিষয়টিকে পূর্ণ সমর্থন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনস্থাপনের জন্য ট্রাম্প কাজ করছেন কি না জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লিভিট এই জবাব দেন।

হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হামাসকে স্পষ্ট করে বলেছেনÑ যদি তারা সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তা হলে তাদের নারকীয় মূল্য দিতে হবে। তার মন্তব্যÑ এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে হামাস দায়ী। যখন তারা অক্টোবর ইসরাইলের ওপর আক্রমণ করে তখনই পরিস্থিতি নির্ধারিত হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি চান সমস্ত জিম্মি বাড়ি ফিরে আসুক। অতএব, ইসরাইল এবং আইডিএফ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন ট্রাম্প।

এদিকে গাজার পাঁচ লাখ বাসিন্দাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে সিনাইয়ে আশ্রয় দিতে রাজি আছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল সিসি। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-আকবারের বরাতে শুক্রবার তথ্য জানায় টাইমস অব ইসরাইল।

গাজাকে পুনর্গঠন করতে কাজ করছেন আরব বিশ্বের নেতারা। মিসরের প্রেসিডেন্ট তাদের জানিয়েছেন, যখন গাজা পুনর্গঠনের কাজ চলবে, তখন অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনিকে সিনাইয়ে আশ্রয় দিতে পারবেন তিনি। খবর আলজাজিরা, বিবিসি সিএনএন অনলাইনের।

গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবারের বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনগণের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর পানি ছিটিয়েও তাদের দমানো যায়নি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে।

বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যায়। জেরুজালেম তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। আয়োজকরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে গাজায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে ওঠে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশী সরকারগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় হামলা জোরদার করে ইসরাইল। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় এখনো হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না। ধারণা করা হচ্ছে, জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত আছে।

ব্রাদার্স ইন আর্মস আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী ইতান হার্জেল বলেন, ‘এই সরকার এখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য, ইসরাইলের জনসাধারণকে বিরক্ত করবে, এমন বিষয়গুলো থেকে নজর অন্যদিকে সরানোর জন্য আবারও যুদ্ধ শুরু করেছে। সরকার সম্ভাব্য সব পর্যায়ে সব ধরনের বৈধতা হারিয়েছে। তারা ব্যর্থ হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোতেও অবস্থান নিয়েছিল। তাদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনো জিম্মি থাকা মানুষদের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। অনেকে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন এবং স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।

ওদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই আগ্রাসনকে অত্যন্ত বড় ধরনের অপরাধ বিপর্যয়কর বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এটি পুরো মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়। আর তাই গোটা উম্মাহকে সব ধরনের মতভেদ ভূলে এই অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের সব অঞ্চলের মুক্তিকামী সবাইকে এই বিশ্বাসঘাতকতামূলক বিপর্যয়কর পদক্ষেপ মোকাবিলা করতে হবে যাতে আবারও শিশু-হত্যা, ঘরবাড়ি ধ্বংস ফিলিস্তিনি জনগণকে শরণার্থী হতে না হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, মার্কিন সরকার এই বিপর্যয়ের দায়-দায়িত্বের শরিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মার্কিন সরকারের ইশারায় অথবা তাদের সম্মতিতে এই অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। তিনি আরা বলেন, ইয়েমেন দেশটির বেসামরিক জনগণের ওপর হামলাও আরও এক অপরাধযজ্ঞ যা অবশ্যই ঠেকাতে হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বৃহস্পতিবার ফার্সি নববর্ষ ১৪০৪ শুরু হওয়া উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে এসব মন্তব্য করেন।

×